টাঙ্গাইলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি নেতা-কর্মীরা
ককটেল বিস্ফোরণ ও নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ টাঙ্গাইলে দুই সপ্তাহে ১২টি থানায় ১০টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এসব মামলায় বিএনপি ও সংগঠনের ২৫৩ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬ শতাধিক আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেওয়া এবং জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে ৫০ নেতা-কর্মীকে।
জেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, মিথ্যা অভিযোগ এনে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করার জন্য পুলিশ এসব “গায়েবি” মামলা দায়ের করছে। ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই এ মামলা। তারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরে থাকতে পারছেন না।
তবে বিএনপি নেতাদের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেলা পুলিশ। তাদের দাবি, নাশকতা সৃষ্টির প্রস্তুতিসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এসব মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একইসঙ্গে মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।
বিএনপি নেতারা জানান, ২১ নভেম্বর টাঙ্গাইল শহরে বিএনপির প্রস্তুতি সভা থেকে ফেরার পথে ৩ আইনজীবীসহ ১২ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ওই রাতেই তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত একদিন করে ১২ জনকে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
একইদিন নাগরপুর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ২ জনকে এবং ১৭ নভেম্বর কালিহাতী উপজেলার ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করে। আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রতি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়।
এ ছাড়াও কালিহাতীর মামলায় ২৯ জনের নামসহ ৩০/৪০জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। নাগরপুরের মামলায় ২১ জনের নামসহ ৪০/৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। ২৯ নভেম্বর দেলদুয়ারে বিএনপির ২০ নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে। পরে গ্রেপ্তার দুইজনকে একদিন করে রিমান্ড দেন আদালত।
২২ নভেম্বর ঘাটাইলে পুলিশের উপর ককটেল হামলার অভিযোগে বিএনপির ৩৫ জনের নামসহ ৪০/৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া ১০ নেতা-কর্মী পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
২৩ নভেম্বর মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৬ নেতার দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
২৪ নভেম্বর বাসাইলে থানার উপ-পরিদর্শক টিটু চৌধুরী বাদী হয়ে ১৬ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনকে আসামি করেন। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রতি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় তিনজনকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
৩০ নভেম্বর রাতে সখীপুর উপজেলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৮৮ বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী। সেদিন রাতেই উপজেলা বিএনপি, কৃষক দল এবং যুবদলের ৪ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
একই দিনরাতে ভূঞাপুরে ১৬ জনের নাম উল্লখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করে মামলা দিয়েছে পুলিশ। আসামির মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজাত পাঠিয়েছে। তার মধ্যে একজন একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
১ ডিসেম্বর গোপালপুরে ২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার পাঁচজনকে একদিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
মামলাগুলো দায়েরের পর এলাকার বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। নেতা-কর্মীরা জানান, যাদের নামে মামলায় রয়েছে তারা গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়েছেন। অন্যরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন। প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। যে কাউকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করার সুযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে সখীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সাজু জানান, আসলে কোনো ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাই ঘটেনি। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় নেতা-কর্মীরা স্থানীয় একটি ক্লাবে বসে টিভিতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখছিলেন।
টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি দুর্জয় হোড় শুভ জানান, ওয়ারেন্ট ছাড়াই ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে আটক করে গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। নেতাদের খুঁজতে রাতে বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু জানান, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে সরকার বানচাল করতে পুলিশ দিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও মিথ্যা-গায়েবি মামলা দিচ্ছেন। কোথাও কোনো ঘটনা ঘটেনি। এসব মামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই পুলিশ ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা গায়েবি মামলা দায়ের করছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য বাড়ি ঘরে হানা দিচ্ছে। পুলিশের প্রতি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ কোথাও কোনো ককটেল বিস্ফোরণ হয়নি।
তিনি আরও জানান, কাউকে বাড়ি থেকে, কাউকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা রাস্তা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। মামলার কোনো সত্যতা নেই। অবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে গ্রেপ্তারদের মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। শত বাধা সত্ত্বেও টাঙ্গাইল জেলা থেকে বিএনপির ২০/২৫ হাজার নেতা-কর্মী ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দেবে আশা করছি।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দীন জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে জমায়েত হয়। দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। এখন মন্তব্য করা সঠিক হবে না।
এসএন