মাদারীপুরে শীতের পিঠা বিক্রির ধুম
সকালের কুয়াশা কিংবা সন্ধ্যার হিমেল বাতাসে ভাপা পিঠার গরম আর সুগন্ধি ধোঁয়ায় মন আনচান করে ওঠে। সরষে বাটা, ধনে পাতা বাটা অথবা শুঁটকির ভর্তা মাখিয়ে চিতই পিঠা মুখে দিলে ঝালে কান গরম হয়ে শীত পালায়। শীতের ভাপা ও চিতই পিঠা গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। শীতের হাওয়া গায়ে লাগলে মনে পড়ে যায় পরিচিত এই পিঠাগুলোর কথা।
এখন আর পিঠা বানানোর দৃশ্য আগের মতো ঘরে ঘরে দেখা যায় না। সে কারণে ঘরের বাইরের দোকানের পিঠাই এখন ভরসা। এখনো শীত জেঁকে না বসলেও এরই মধ্যে মাদারীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে-মোড়ে গড়ে উঠেছে খোলা আকাশের নিচে বা ভ্যান গাড়ির উপরে পিঠার দোকান।
পিঠাপ্রেমী মানুষ পিঠার স্বাদ গ্রহণ করতে ফুটপাতের এসব পিঠার দোকানে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ভিড় করছেন। আবার অনেককেই দেখা যাচ্ছে পিঠার দোকানের চুলার পাশে বসেই গরম পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন। অনেকে পরিবারের চাহিদা মেটাতে পিঠা কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। এসব পিঠার দোকান বসছে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা এবং বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চৌরাস্তার মোড়ে, কাজীর টেক পুরাতন ফেরিঘাট, পাকা মসজিদ, বাহেরচর কাতলা, কোটের মোড়, জেলখানার কোনাসহ বিভিন্ন অলি-গলিতে রাস্তার ফুটপাতে ও মোড়ে মোড়ে চলছে ভাপা পিঠা বিক্রির ধুম। ভাপা পিঠার পাশাপাশি বিক্রি করছে চিতই পিঠা।
চৌরাস্তা অটো স্ট্যান্ডের সামনে কাজী লিমন ইসলাম পিঠা খেতে খেতে বলেন, সব ধরনের ক্রেতা এখানে পিঠা খেতে আসে। আবার কেউ কেউ বাড়িতে ছেলে-মেয়েদের জন্যও পিঠা কিনে নিয়ে যান। আমি যশোর থেকে এসে মাদারীপুরে রিকশা চালায় অনেক বছর ধরে। কাজের কারণে বাড়িতে গিয়ে পিঠা খাওয়ার সময় হয়ে উঠে না। তাই এখানে সেই স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করছি।
শরিয়তপুর জেলা থেকে পিঠা কিনতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, শীতের সময় পিঠার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। গরম গরম চিতই পিঠার সঙ্গে বিভিন্ন মসলা মুখে পানি এনে দেয়। ব্যস্ত জীবনে বাসায় পিঠা বানানোর সময় না থাকায় তাই দোকান থেকে বাসায় পিঠা কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
পিঠা বিক্রেতা আমেনা খাতুন বলেন, সাত বছর ধরে এখানে পিঠা বিক্রি করি। আমার স্বামী নেই। হার্টের সমস্যা আছে। তাপরও সন্তান নিয়ে আমি এখানেই পিঠা বিক্রি করি। শীতের ভাব কম থাকায় আগের মতো তেমন পিঠা বিক্রি হয় না। আমার চলতে অনেক কষ্ট হয়। সরকার যদি আমাকে একটু সাহায্য করত তাহলে চিকিৎসা করতে পারতাম।
ফেরিঘাট এলাকার ষাটোর্ধ পিঠা বিক্রেতা নুরজাহান বেগম বলেন, আমি দিনে রাস্তার কাম করি। আর রাতে রাস্তার পাশে বসেই পিঠা বিক্রি করি। এখন শীত কম থাকায় পিঠা তেমন জমে উঠেনি। যদি একটু বেশি বিক্রি হতো তাহলে আমার বৃদ্ধ স্বামী নিয়ে খেয়ে বাচতে পারতাম।
পিঠা বিক্রেতা আজাদ মিয়া জানান, শীত আসতেই দোকানে কাজের চাপ বেড়ে যায়। পিঠা বানানো থেকে সবকিছু করতে হয়। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার হয়। তিনি ৫টি চুলায় পিঠা তৈরি করেন। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে পিঠা বানানো ও বিক্রি।
বাহেরচরকাতলা এলাকার পিঠা বিক্রেতা সোমেলা বেগম বলেন, চালের গুঁড়া দিয়ে চিতই ও ভাপা পিঠা বানান। তার তৈরি পিঠার মান ভালো হওয়ায় সিরিয়াল দিয়ে সবাই পিঠা খায়। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ৫ থেকে ১০ কেজি চালের পিঠা বিক্রি করেন তিনি। এ ছাড়া শহরে তার মতো আরও অনেক পিঠা বিক্রেতা আছে। শীত যত বাড়বে তাদের পিঠা বিক্রিও ততো বাড়বে।
এসএন