কটিয়াদীতে ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে দ্রুত ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নেওয়া এবং শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন ঋণের ক্ষেত্রে দ্রুত পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ঘুষ দিতে না চাওয়ায় এক শিক্ষকের সঙ্গে পেশাগত অসদাচরণের একাধিক অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার মাধ্যমে ঘুষ দাবির অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেই কর্মকর্তা।
কটিয়াদী বাজার শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার (ঋণ কর্মকর্তা) মো. সজিব মিয়ার বিরুদ্ধে উঠেছে এসব অভিযোগ। ২৩ অক্টোবর এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার ডিজিএম জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকীর কাছে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় পাইকসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদ কামাল।
তিনি জানান, তার স্ত্রী মুমুরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তারের নামে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণের জন্য ব্যাংকে গিয়েছিলেন। সেখানে কথা হয় সজিব মিয়ার সঙ্গে। আবেদন ফরমসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও অনুমতিপত্র নিয়ে ব্যাংকে জমা দেন তিনি। এ সময় সজিব মিয়া একটি স্লিপ দিয়ে তাতে প্রধান শিক্ষকের প্রত্যায়ন, নিয়োগপত্রের কপি ও জিপিএফ ফান্ডের স্টেটমেন্ট জমা দিতে বলেন। তবে ঋণের জন্য এসব কাগজ জমা দেওয়ার দরকার পড়ে না। আর শেষ পর্যন্ত এসব কাগজ ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগে ঘটে নানা ঘটনা।
মাহমুদ কামালের অভিযোগ, এসব কাগজ নেই- এ কথা বললে সজিব বলেন, ‘তাহলে ঋণ মিলবে না’। একপর্যায়ে কাগজপত্র ছুড়ে ফেলে দেন। পরে এ বিষয়টি ম্যানেজারকে জানালে তিনিও একই আচরণ করেন। তখন সজিব মিয়া বলেন, ‘আপনাকে ঋণ দেব না, আপনি যা পারেন করেন।‘ ম্যানেজারের উপস্থিতিতে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি একটা স্টুপিড, অথর্ব মানুষ। আপনার ঋণ হবে না।’ পরে ম্যানেজার দুই ঘণ্টা বসিয়ে রেখে তারা নিজেরা নিজেরা আলোচনা করে আবারও সেই স্লিপ ধরিয়ে দেন। এভাবে তাকে ১৫ দিন দেরি করান সজিব। পরে ইঙ্গিতে টাকাপয়সা দাবি করেন।
একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, জানতে পারলাম বিভিন্ন ঋণের ক্ষেত্রে দ্রুত পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন সজিব মিয়া। দুই সপ্তাহ আগে আরেক সহকর্মীর ঋণের জন্য গ্যারান্টার হতে ব্যাংকে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেও তিনি দুর্ব্যবহারের শিকার হন।
কটিয়াদী উপজেলার পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম শিপন জানান, ছয় মাস আগে তিনি তার স্ত্রীর নামে ঋণের জন্য সজিব মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় তাকে বলা হয়, দ্রুত ঋণ নিতে হলে খরচ দিতে হবে। পরে আট লাখ টাকা ঋণ তুলতে সাড়ে চার হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।
চরআলগী গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই জানান, দুই বারে তিনি ১৫ লাখ টাকা ঋণ তুলেছেন। এতে সরকারি খরচের বাইরেও সজিব মিয়াকে সাত হাজার টাকা বাড়তি দিতে হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, সজিব মিয়াকে ঘুষ না দিয়ে ঋণ পাওয়া শিক্ষকের সংখ্যা খুবই কম। যারা প্রতিবাদ করেন তারাই দুর্ব্যবহারের শিকার হন অথবা দেরিতে টাকা পান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সজিব মিয়া সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই শিক্ষকের স্ত্রীকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষকের সঙ্গে আমি দুর্ব্যবহার করিনি বরং তিনি আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছেন।’
কটিয়াদী বাজার শাখার ম্যানেজার রাশেদ আহমেদ বলেন, ‘সজিব আমার ব্যাংকের স্টাফদের মধ্যে সবচেয়ে কর্মঠ এবং অত্যন্ত ভালো। তার বিরুদ্ধে লিখিত তো দূরের কথা, এখন পর্যন্ত কেউ মৌখিক অভিযোগও করেনি। সেদিন মাহমুদ কামাল সাহেবের সঙ্গে তার খানিকটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে আমি মীমাংসা করে দিয়েছিলাম। পরে স্ত্রীকে ঋণ দেওয়া হয়েছে।’
সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘একজন সহকারী শিক্ষকের পক্ষ থেকে সজিব মিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসএন