লাল মাটির পাহাড়ে কফি চাষ, শিক্ষকের বাজিমাত!
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি গড় অঞ্চলের মহিষমারা গ্রামের শিক্ষক ছানোয়ার হোসেন। ৫ বছর আগে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে কৃষি উদ্যোক্তায় যুক্ত হন। শুরুতেই শখ করে কফির চাষাবাদ করে। প্রথমে রাঙ্গামাটির রায়খালী থেকে ২০০ চারা সংগ্রহ করে আনেন সে। পরে তার ২ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন পাহাড়ি অঞ্চলের লাল মাটিতে স্বপ্নের কফি চাষ। বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে ৬০০ অধিক পরিপক্ক কফি গাছ। গাছগুলোতে থোকায় থোকায় কফি গুটি ধরেছে।
কফি চাষি ও শিক্ষক ছানোয়ার হোসেন জানান, মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পরিপক্ব গাছগুলোতে ফুল ধরা শুরু করে। মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুলগুলো গুটিতে পরিণত হয়। আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে গুটিগুলো পরিপক্ক হয়। পরে গুটিগুলো রোদে কড়াভাবে শুকিয়ে বাজারজাত উপযোগী করতে মেশিনের সাহায্যে তা গুড়া করতে হয়।
তিনি জানান, আবহাওয়া অনুকূল ও ফলন ভাল থাকলে হেক্টর প্রতি ৭৫০ থেকে ১ হাজার কেজি এবং প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ১ কেজি কফি পাওয়া সম্ভব। স্থানীয়ভাবে কফির দাম নির্ধারিত না থাকলেও গ্রীন কফি ১ হাজার ৫০০ টাকা ও প্রসেসিং করা কফি ২ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যাচ্ছে।
এদিকে, ছানোয়ার কফি চাষে সাফল্য দেখে স্থানীয়রা কফি চাষ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। কফি চাষ দেখতে আশ-পাশসহ দূর-দূরান্ত থেকে কৃষি উদ্যোক্তারা ছুটে আসছেন তার থেকে পরামর্শ, বীজ ও চারা সংগ্রহের জন্য। শিক্ষক ছানোয়ারের কৃফি চাষের সাফল্যে কাঙ্খিত ফলন দেখে উৎসাহিত হয়ে অনেকেই কফি চাষ শুরু করেছেন। ফলে সাফল্যের ছোঁয়া পাচ্ছেন চাষিরা।
অপরদিকে, উপজেলার পাহাড়ি গড় অঞ্চল এলাকার উঁচু ও লাল মাটি, ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া এবং মাটির উর্বরতা অনুকূলে থাকায় এ অঞ্চলে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় উপজেলা কৃষি বিভাগ। সম্প্রতি 'কাজু বাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ন ও স¤প্রসারণ' প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকরা কফির চাষ শুরু করছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর স্থানীয় কৃষকদের মাধ্যমে উপজেলায় ১১ হেক্টর জমিতে কফির চাষ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৩ জন কৃষকের মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার কফির চারা বিতরণ করা হয়েছে। ৬০ প্রজাতির কফি থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে দুই রকমের কফির চাষ হয়। তারমধ্য এ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য 'অ্যারাবিকা' ও 'রোবাস্টা' জাতের কফির চাষ শুরু করেছে চাষিরা। চাষ উপযোগী আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকূল থাকায় উন্নতমান এবং মনমাতানো ঘ্রাণের কফির চাষ স¤প্রসারণের জন্য এ প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ কার্যক্রম চলছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আল মামুন রাসেল বলেন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের আন্তরিক সহযোগিতায় পাহাড়ি এলাকায় কাজু বাদাম, কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫৩ জন কৃষক ১১ হেক্টর জমিতে কফির চাষ শুরু করেছে। আবহাওয়া, মাটির গঠন বিন্যাস মিলে গড় এলাকার লাল মাটিতে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। চাষিরা যাতে কফি চাষে সাফল্য পায় সে লক্ষ্যে চাষিদের প্রশিক্ষণসহ প্রকল্প অনুযায়ী সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এএজেড