রাত ১০ টার পর সিন্ডিকেটে নির্ধারিত হয় ডিমের দাম
প্রতিদিন রাত ১০টায় বসে সিন্ডিকেট এর সভা। আর এই সভার মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় ডিমের মূল্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অনেক জায়গায় ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে এই সিন্ডিকেট। বিনিময়ে খামারিদের কাছ থেকে নেয় ১৫ শতাংশ কমিশন। খামারিরা তাদের নির্ধারণ করা দামেই ডিম বিক্রি করেন।
সাভারে এমনই একটি সিন্ডিকেট এর খোঁজ পাওয়া গেছে। এই সিন্ডিকেটের নির্ধারণ করা দামে ডিম বিক্রি হয় সাভার, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায়।
সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শাহজালাল মার্কেটের ডিমের আরতে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ডিম ব্যবসায়ী সমিতি। বর্তমানে এই সমিতির সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৫ জন। প্রতিদিন রাত ১০টায় এই সমিতির মিটিং হয়। সেই মিটিংয়ে সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় প্রতিদিনের ডিমের বাজার দর।
সমিতির সভাপতি ওবায়দুল খান ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, দেশের প্রায় অর্ধেক বাজারে ডিম সরবরাহ করা হয় ঢাকার তেজগাঁও সমিতির নির্ধারণ করা দামেই। এর পর হলো তাদের অবস্থান।
ওবায়দুল খান আরও জানান, আমরা প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানের বাজার দর সংগ্রহ করি। রাত ১০টায় সমিতির সদস্যরা বসে মিটিং করি। এখানে সদস্যদের ভোটের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করি। রাতেই খামারিদের এই দাম জানিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন সেই দামেই ডিম বিক্রি হয়।
কী কী বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম, মুরগীর খাদ্য, পরিবহন খরচ ইত্যাদির গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাছাড়া চাহিদার চেয়ে আমদানি কম হলেই ডিমের দাম বেড়ে যায়।
হঠাৎ ডিমের দাম এতো বেড়ে যাওয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাদ্যের দাম বেশি, বিদ্যুতের দামসহ খামার চালানোর খরচ বেড়ে গেছে। ফলে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। খামার বন্ধ হওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে। চাহিদা বেড়েছে,তাছাড়া পরিবহন খরচও বেড়েছে। এ কারণেই ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সব দিক বিবেচনা করে বাজার দর নির্ধারণ করি।
ডিমের দাম নির্ধারণ করে শতকরা ১০ থেকে ১৫ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করে ওবায়দুল খান বলেন, এই টাকাটা পরিবহন খরচ হিসেবে তারা আমাদের দিয়ে থাকেন। এটাই আমাদের লাভ।
ধামরাই উপজেলার সুয়াপূর এর ভাদালিয়া গ্রামের সাজু পোল্ট্রি খামারের মালিক সাজু মিয়া বলেন, সাজু মুরগির খামার। হঠাৎ করে প্রতি বস্তা খাদ্যের দাম ২০০ টাকা বেড়েছে। তাছাড়া ডিমের দাম নির্ধারণ করেন ডিম ব্যবসায়ী সমিতি। তাদের নির্ধারন করা দামেই আমাদের ডিম বেচতে হয়। তারা ডিমের দাম নির্ধারণ করে মেসেজ দিয়ে আমাদের দামটা শুধু তারা বলে দেয়। কিন্তু তারা কত করে বিক্রি করেন এটা আমাদের বলেন না।
পাইকারি ব্যবসায়ী আবু তালেব বলেন, প্রতি একশ পিস ডিমে দাম বেড়েছে প্রায় ২৫০ টাকা। প্রতিরাতে ডিম ব্যবসায়ী সমিতি দাম নির্ধারণ করে দেয়। সেই দাম অনুযায়ী আমাদের টাকা পরিশোধ করতে হয়। এই দামেই আমরা ডিম কিনে বিক্রি করি।
ঢাকা প্রকাশকে খুচরা ব্যবসায়ী টিপু মিয়া বলেন, আমাদের চাহিদা অনুযায়ী ভ্যানে করে প্রতিদিন ডিম সরবরাহ করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা যে দামে আমাদেরকে ডিম দেন তার থেকে ৫০ পয়সা লাভে আমরা ডিম বিক্রি করি। আমাদের লাভ সামান্য। যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন মুলত তারাই লাভবান।
এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির সাভার শাখার সভাপতি সাহউদ্দিন নঈম বলেন, সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে নিত্যপণ্যের বাজার থাকলে দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। খামারিরা ডিম উৎপাদন করেন । এই দাম নির্ধারণ করবেন তারাই। যদি আড়ৎদাররা ডিমের দাম নির্ধারণ করেন তাহলে খামারি ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এএজেড