হরিণ শিকার ও অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সুন্দরবনে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে বন বিভাগ। এ কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বনরক্ষীদের এবারের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিবছর ঈদের ছুটির সময় সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়, বিশেষ করে হরিণ শিকারীরা অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে এবার ঈদের আগেই শিকারিরা আরও বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে, যা বন বিভাগের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে, সম্প্রতি বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের টেপার বিল ও শাপলার বিল এলাকায় ভয়াবহ দুটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে প্রায় ছয় একর বনভূমির সুন্দরীসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা পুড়ে যায়। বন বিভাগের ধারণা, মৌসুমী মাছ শিকারীরা এ ধরনের অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুমে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে, যা বনাঞ্চলের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। হরিণ শিকার ও অগ্নি-সন্ত্রাস প্রতিরোধেই এবার বন বিভাগ সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করেছে।
সুন্দরবন বিভাগ ও কোস্টগার্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত বন ও বনসংলগ্ন এলাকা থেকে ৩০৮ কেজি হরিণের মাংস, দুটি হরিণের মাথা, দুটি চামড়া, আটটি পা এবং বিপুল পরিমাণ ফাঁদ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অভিযানে সাতজন চোরাশিকারিকে আটক করা হয়েছে। কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন ও বন বিভাগ যৌথভাবে এসব অভিযান পরিচালনা করেছে।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে চোরাশিকারিদের তৎপরতা বেড়ে যায়, তাই হরিণসহ বন্যপ্রাণী শিকার প্রতিরোধে শরণখোলা রেঞ্জের সকল স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টহল কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাগেরহাটের সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, "সুন্দরবনে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। হরিণ ও বন্যপ্রাণী শিকার এবং অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদের ছুটি সীমিত করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ছুটি দেওয়া হবে না।"
বন বিভাগের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের সকল স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বিশেষ টহল কার্যক্রম পরিচালনারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে চোরাশিকারি ও অগ্নি-সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপ প্রতিহত করা যায়।
বন বিভাগের এই পদক্ষেপের ফলে সুন্দরবনে অবৈধ শিকার ও আগুন লাগানোর প্রবণতা হ্রাস পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।