স্বামীর অনুমতি ছাড়াই তার ফোন তল্লাশি বা গোপনে নজরদারি করা সৌদি আরবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, এমনটাই সতর্ক করে দিয়েছেন দেশটির এক শীর্ষ আইনজীবী রীম ইব্রাহিম। তিনি জানান, এমন অপরাধে স্ত্রীর বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের জরিমানা এবং কঠোর শাস্তি আরোপ করা হতে পারে।
গালফ নিউজে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সৌদি আরবের আইনে এ ধরনের গোপনীয়তা লঙ্ঘনকে ‘ইবসড্রপিং’ (অবৈধভাবে তথ্য শোনা) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা অপরাধমূলক।
আইনজীবী রীম ইব্রাহিম আরও বলেন, যদি কোনো স্ত্রী তার স্বামীর ফোন গোপনে তল্লাশি করেন, তবে এটি সাইবার অপরাধ আইন লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। এমন অপরাধের জন্য স্ত্রীর বিরুদ্ধে এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা হতে পারে, কিংবা এই দুটি শাস্তির যে কোন একটি। সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, স্বামী তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন যদি তিনি তার ফোনের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ করেন।
তবে, এ বিষয়ে আইনের আরও একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আল ওহাইবি। তিনি জানান, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে শুদ্ধতা বা ভুল বিচার করা সহজ নয়। তিনি বলেন, যদি স্ত্রীর কাছে স্বামীর ফোনের পিন নম্বর থাকে, তবে ফোনে প্রবেশ করা আইনি হিসেবে গণ্য হবে এবং এটি অপরাধ হিসেবে ধরা হবে না। এমনকি যদি স্ত্রীর উদ্দেশ্য স্বামীর ফোনে কিছু খোঁজ করা হয়, তাও আইনগতভাবে কোনো সমস্যা তৈরি করবে না।
মোহাম্মদ আল ওহাইবি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করেন, "যেমন, যদি আপনি কাউকে আপনার বাড়ির চাবি দেন, তাহলে সে বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে। তারপর, আপনি কি তাকে বাড়ির গোপনীয়তা ভঙ্গ করার অভিযোগ করতে পারেন?" তিনি আরও বলেন, যদি স্ত্রীর ফোনে কোনো অপরাধের আলামত, যেমন ছবি বা ভিডিও পাওয়া যায়, তাহলে সে বৈধভাবে ফোনটি খুলে প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবে।
এ ধরনের আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে এ ধরনের গোপনীয়তা ভঙ্গের শাস্তির ভয়াবহতা আরও স্পষ্ট হয়। ২০২১ সালে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস আল খাইমাহ আদালত এক স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার স্বামীর ফোনে নজরদারি করার কারণে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিল।
এই ধরনের আইনগত পদক্ষেপগুলো আমাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে: স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে গোপনীয়তা, আস্থা এবং সম্মান রাখা অত্যন্ত জরুরি। আইন অনুযায়ী, গোপনীয়তা ভঙ্গ করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতে পারে, যার ফলস্বরূপ হতে পারে শাস্তি, জরিমানা কিংবা পারিবারিক অশান্তি। তাই, সতর্কতা অবলম্বন এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, এই আইনি পরামর্শগুলো আমাদের দেশে নতুন আইনের প্রয়োগ এবং প্রযুক্তিগত বিষয়ে সচেতন থাকার প্রয়োজনীয়তাকেও সামনে নিয়ে আসে, যাতে আমরা স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের মধ্যে সঠিক আইন এবং শিষ্টাচারের প্রতি সম্মান রাখতে পারি।