কেরানীগঞ্জে চুরি হওয়া শিশু সাইফান শরীয়তপুর থেকে উদ্ধার
অপহরণকারী তানজিলা আক্তার পারভীন (বামে) এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশু সাইফান। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকা থেকে চুরি হওয়া ৮ মাস বয়সী শিশু সাইফানকে উদ্ধার করেছে র্যাব। রোববার (১৩ অক্টোবর) সকালে আইসক্রিম কিনে দেওয়ার কথা বলে দোকানে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। সাইফান মজুমদারকে চুরির অভিযোগে তানজিলা আক্তার পারভীন (৩৫) নামে এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে শিশুটি চুরির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে শিশু সাইফানকে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১০ এর সহকারী মিডিয়া কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ কর্মকর্তা (এএসপি) তাপস কর্মকার। তিনি বলেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার আগানগর এলাকার বাসিন্দা সাকিলা এনাম ও এনামুল হক মজুমদার দম্পতির তিনটি পুত্র সন্তান।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তাপস কর্মকার বলেন, গত ১২ অক্টোবর তানজিলা শিশুটির মা সাকিলার বাসায় এসে তার অসহায়ত্বের কথা বলে শুধু থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে বাসায় কাজের জন্য আশ্রয় দিতে আকুতি-মিনতি জানায়। তার অসহায়ত্বের কথা শুনে সরল বিশ্বাসে মানবিক দিক বিবেচনা করে তানজিলাকে আশ্রয় দেয়। তার পরেরদিন গত ১৩ অক্টোবর ১১টার দিকে সাকিলার মেজো ছেলে আহনাফ (৬) আইসক্রিম খাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করলে তানজিলা আহনাফ ও সাকিলার ছোট ছেলে সাইফানকে নিয়ে আইসক্রিম আনার জন্য তাদের বাসার কাছে একটি দোকানে যায়।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর আহনাফ আইসক্রিম নিয়ে একা বাসায় গেলে আহনাফের মা সাকিলা আহনাফকে জিজ্ঞাসা করে যে, তানজিলা ও সাইফান কোথায়। আহনাফ তার মাকে জানায় যে, পারভীন আহনাফকে আইসক্রিম কিনে দিয়ে বলেছে তুমি বাসায় যাও আমি সাইফানকে নিয়ে আসতেছি। সাকিলা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর তানজিলা ও সাইফানের কোন খোঁজখবর না পেয়ে সম্ভাব্য আশপাশের সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তাদের সন্ধান না পেলে দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সাইফানের কোন সন্ধান না পেলে সাকিলা বুঝতে পারে যে, পারভীন সাইফানকে অপহরণ করেছে। পরবর্তীতে সাকিলা তার স্বামী ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় তানজিলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
র্যাব-১০ এর এ কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে অপহরণের বিষয়টি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। বিষয়টি জানতে পেরে র্যাব-১০ এর একটি দল অপহৃত ভিকটিম সাইফানকে দ্রুত উদ্ধারে মাঠে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে র্যাব-১০ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৮ এর সহযোগিতায় শরীয়তপুর জেলার পালং থানার চরলক্ষী নারায়ণ এলাকায় একটি যৌথ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৮ অপহরণকারী তানজিলা আক্তার পারভীন গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তানজিলা শিশু সাইফানকে অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করে। তার দেখানো মতে ঘটনাস্থলে একটি বাসা থেকে অক্ষত অবস্থায় শিশু সাইফান মজুমদারকে উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামি র্যাবকে জানায়, আসামি তানজিলার বাবা-মা নেই। প্রায় ১২ বছর পূর্বে ময়মনসিংহে এক ব্যক্তির সাথে তানজিলার বিবাহ হয়। ঐ স্বামীর ঘরে আরেকজন স্ত্রী ছিল। সেখানে সতীনের একই সংসারে বেশ কিছুদিন থাকার পর তানজিলার বাচ্চা না হওয়ার কারণে স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরবর্তীতে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার আগানগর এলাকায় ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাসকারী প্রবাসী আশরাফুল আলমের সাথে পুনরায় পারভীনের বিবাহ হয়। আশরাফুলও বিবাহিত ছিল তার প্রথম স্ত্রী পাগল হয়ে নিরুদ্ধেশ ছিল এবং ঐ স্ত্রীর ঘরের একটি প্রতিবন্ধী ছেলে সন্তানও রয়েছে যার দেখাশোনা তানজিলা করত। বিয়ের কয়েক মাস পর তানজিলার বাচ্চা না হওয়ার কারণে তাদের সংসারে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাধ লেগেই থাকত।
অতঃপর আশরাফুল প্রবাসে চলে গেলে তার কিছুদিন পর তানজিলা আশরাফুলকে জানায় যে সে অন্তঃসত্তা হয়েছে এ কথা শুনে আশরাফুল অনেক খুশি হয়। পরবর্তীতে তার বছর খানেক পর আশরাফুল দেশে আসার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিষয়টি তার স্ত্রী কে জানায়। আশরাফুল দেশে এসে যদি জানতে পারে যে, তানজিলা আশরাফুলকে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি মিথ্যা বলেছে তাহলে পুনরায় তার সংসার ভেঙে যাবে।
তাই সে ৮ থেকে ১০ মাস বয়সের একটি শিশু অপহরণ করার মতো জঘন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তানজিলা শিশু সাইফানের মা সাকিলার ভাড়াটিয়া প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে সে সাইফানের সম্পর্কে আগে থেকেই সবকিছু জানতো। তাই সে সাইফানকেই অপহরণ করার পরিকল্পনা করে। অতঃপর পরিকল্পনা মোতাবেক সাকিলার বাসায় যায় এবং সাকিলাকে অসহায়ত্বের মিথ্যা কথা বলে সাকিলার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রথমে তার বাসায় আশ্রয় নেয় এবং পরবর্তীতে সাইফানকে অপহরণ করে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।