ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতালা ইউনিয়নের কান্তি ভিটা সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে নিহত সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শ্রী জয়ন্ত কুমার সিংহের (১৫) মরদেহ ৪৮ ঘণ্টা পর ফেরত দিয়েছে ভারত।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ১টার দিকে ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশের পুলিশের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে।
পরে বিজিবি ও বিএসএফের সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহটি নিহতের চাচা শ্রী বাবুল চন্দ্র সিংহের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জানা যায়, সোমবার গভীর রাতে ধনতালা বিজিবি সীমান্তের মেইন পিলার ৩৯৩-এর পাশ দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশকালে ভারতীয় ডিংগাপাড়া বিএসএফ বাহিনী গুলি চালালে শ্রী জয়ন্ত কুমার সিংহ (১৫) ভারতের অভ্যন্তরে গুলি বৃদ্ধ হয়ে নিহত হয়। সে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ফকির ভিঠা গ্রামের শ্রী মহাদেব কুমার সিংহের ছেলে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির বলেন, ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন ৫০ বিজিবির ধনতলা বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় রাত ১টার দিকে বিজিবি ও বিএসএফের উপস্থিতিতে ভারতীয় পুলিশ আমাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। পরে আমরা তার পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করি।
এর আগে, গত ১ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী নিহত হয়। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আটটি পদে রদবদল করা হয়েছে। এর মধ্যে রোগ নিয়ন্ত্রণ, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান ও ন্যাশনাল এইডস অ্যান্ড এসটিডি কন্ট্রোলে নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে তিনজনকে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পার-২ শাখার উপসচিব শোভন রাংসা সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক হিসেবে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. ফরহাদ হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হলো। এই বিভাগের বর্তমান পরিচালক ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের লাইন ডিরেক্টর ডা. শেখ দাউদ আরমানকে ওএসডি করা হলো।
এছাড়া জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (শৃঙ্খলা) ডা. মিছবাহ উদ্দীন আহমেদ। একই সঙ্গে বর্তমান পরিচালক শাহ গোলাম নবীকে ওএসডি করা হয়েছে। আর ন্যাশনাল এইডস অ্যান্ড এসটিডি কন্ট্রোলের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) হয়েছেন উপপরিচালক (পার-২) ডা. মো. খায়রুজ্জামান।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, অধিদপ্তরের পার-২ শাখার উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ পেয়েছেন যথাক্রমে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন-২) ডা. কামরুল হাসান ও লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. খালেদ হোসেন। এছাড়া ওএসডি হওয়া আরও এক কর্মকর্তা হলেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. মো. হালিমুর রশিদ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বদলি ও পদায়নকৃত কর্মকর্তারা আগামী ১৯ নভেম্বরের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদান করবেন। অন্যথায় পরদিন বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত মর্মে গণ্য হবেন।
জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল না, তবে ভারতের সহযোগিতায় স্বাধীনতার সুফল না পাওয়ার শঙ্কা ছিল বলে দাবি করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের কাছে দলটি বেশি সুবিধা পাচ্ছে- এমন আলোচনাকেও ‘মিথ্যা প্রচার’ দাবি করেছেন।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমির এ কথা জানান।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল না। আমরা আশঙ্কা করেছিলাম, ভারতের সহযোগিতায় যদি দেশ স্বাধীন হয় তাহলে স্বাধীনতার সুফল পাওয়া যাবে না। এরপরও এটা সঠিক যে জামায়াত চেয়েছিল এক পাকিস্তান। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী র নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন এবং নানা ধরনের অপকর্মের কারণে সারা জাতি ফুঁসে উঠেছিল, মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। তখন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে।
‘এরপর স্বাধীন বাংলাদেশকে আমরা আমাদের কলিজা দিয়ে ভালোবেসে কবুল করে নিয়েছি’, বলেন জামায়াতের আমির।
তিনি বলেন, তখনকার সময়ে আমাদের চিন্তা বিজয়ী হয়নি, সেই সময় আমাদের চিন্তা পরাজিত হয়েছে, আমাদের সিদ্ধান্ত পরাজিত হয়েছে। এখন জনগণ মূল্যায়ন করবে আমাদের সেই ভূমিকা কতটা যথার্থ ছিল।
সর্বশেষ শেখ হাসিনা দেশত্যাগের কয়েকদিন আগে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল দলটিকে। এ নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় যায় তখন নিষিদ্ধের ঘোর তাদের পেয়ে বসে। নিষিদ্ধের রাজনীতি আমাদের সমর্থনের বিষয় না। এটি জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিষয়।
সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের বক্তব্যে দল দুটির মধ্যে দূরত্বের বিষয়টি সামনে এলেও তা মানতে নারাজ জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে মৌলিক সংস্কার করা সব সংস্কার নয়। কিছু সংস্কার করবে অন্তর্বর্তী সরকার আর কিছু সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার। আমরা মনে করি নৈতিক দায়বদ্ধতা আছে বর্তমান সরকারের। তারা তাড়াহুড়া নেই বলে এই বিষয়টি টেনে লম্বা যেনো না করে এই কথা আমরা বারবার বলেছি।
অন্তর্বর্তী সরকার থেকে জামায়াত বেশি সুবিধা পাচ্ছে এমন অভিযোগও উড়িয়ে দেন ডাক্তার শফিকুর রহমান। তবে সংস্কারের জন্য দিতে চান যৌক্তিক সময়।
নানা-নানির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আব্দুল্লাহ, পেলেন গার্ড অব অনার। ছবি কোলাজ: ঢাকাপ্রকাশ
নানা-নানির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত আবদুল্লাহ (২৩)। মাথায় গুলিবিদ্ধ গুলিবিদ্ধ আবদুল্লাহ ৩ মাস পর বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত আব্দুল্লাহ এর দাফন আজ শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল বলফিল্ড মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করে। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
পরে যশোরের বেনাপোলে তার নানা বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে নানা-নানির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন আব্দুল্লাহ। জানাজায় ইমামতি করেন মুফতি মাওলানা সায়্যেদুল বাসার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান, শার্শা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব খায়রুজ্জামান মধু,বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামির কেন্দ্রীয় কমিটির কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান,জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবীবুর রহমান, থানা আমির রেজাউল ইসলাম, থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসান জহির, বেনাপোল পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভারত বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান ও সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজ শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে আব্দুল্লাহ'র মরদেহ ঢাকা থেকে গ্রামে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আত্মীয় স্বজনদের আহাজারি আর শোকে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।
আবদুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার পেশায় একজন শ্রমিক। অর্থাভাবে কোনো ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি তিনি। আব্দুল্লাহ ছোট থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আব্দুল্লাহ। তাকে ঘিরে আকাশসম স্বপ্ন ছিল দরিদ্র বাবা-মা ও ভাই-বোনদের। তাকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির।
বাবার সহযোগিতায় আর নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে এতদূর পর্যন্ত গিয়েছিলেন তিনি। মেধা ও আচরণের কারণে গ্রামে সবার প্রিয় ছিলেন আব্দুল্লাহ। তিনি ঢাকায় বোনের বাসায় থেকে লেখাপড়া করতেন। তিনি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আন্দোলনের শুরু থেকেই আবদুল্লাহ সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। তার কপালের ঠিক মাঝ বরাবর গুলি লাগে। এমন অবস্থায় প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা তিনি রাস্তায় পড়ে থাকেন।
প্রথমে তাকে মিটফোর্ড এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার মাথা থেকে গুলি বের করা হয়। তবে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকলেও তাকে হাসপাতাল থেকে ১০ আগস্ট জোরপূর্বক ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
এরপর তাকে বেনাপোলে নিয়ে আসেন স্বজনরা। বাড়িতে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে ১১ আগস্ট রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় ডাক্তাররা দ্রুত আবারও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
গত ১২ আগস্ট সকাল ৭টায় তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা মাথার ভেতরে ইনফেকশন দেখতে পান যা তরল প্লাজমার মতো গলে গলে পড়তে থাকে। আবারও তার অপারেশন করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ২২ আগস্ট তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ দিকে মারা যান।