কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণকাজ, ছাদ চুইয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি!
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে প্লাটফর্ম এবং ভিতরের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে, স্টেশন কর্মীরা পরিষ্কার করছেন। ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কাছে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়ায় নির্মিত হয়েছে ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন ছয়তলাবিশিষ্ট আইকনিক রেলস্টেশন। যেখানে রয়েছে পাঁচ তারকা মানের হোটেল, শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, শিশুযত্ন কেন্দ্র, পোস্ট অফিস, কনভেনশন সেন্টার, ইনফরমেশন বুথ, এটিএম বুথ, মসজিদ, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা। যা ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
বর্তমানে স্বল্প পরিসরে চলছে এই রেলস্টেশনের কার্যক্রম। ২৯ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুটের রেলস্টেশনটি তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যেই সামনে আসছে নির্মাণকাজের নানা ত্রুটি। বৃষ্টি হলেই নাকি ছাদ চুইয়ে পানি ঢুকে পড়ছে স্টেশন ভবনের ভেতর। ড্রেনেজের পানি উপচে প্লাবিত হয় প্লাটফর্ম। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে পরিচালন কার্যক্রম। ব্যয়বহুল আইকনিক স্টেশন ভবনটির নির্মাণকাজের মান নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন।
চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) সঙ্গে যৌথভাবে স্টেশন ভবনটি তৈরি করেছে বাংলাদেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। তাদের দাবি, দৃশ্যমান সকল সমস্যা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা হবে। এরই মধ্যে কাজও শুরু হয়েছে।
এদিকে কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের ভেতর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির পানি প্রবেশের ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার (৬ জুলাই)। ওইদিন পানি গড়ায় স্টেশনমাস্টারের রুম পর্যন্ত। এ ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা ভবনটির নির্মাণকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রেলওয়ের একটি প্রতিনিধি দলও স্টেশনটি পরিদর্শন করেছেন।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের কর্মীরা জানিয়েছেন, এদিন কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন ভবনের পাশাপাশি প্লাটফর্মেও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে। এতে বৃষ্টির সময় যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। নিকটবর্তী দোহাজারী ও চকরিয়া স্টেশনের প্লাটফর্মেও বৃষ্টির পানি প্রবেশের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বৃষ্টিতে স্টেশনের ভেতরে পানি প্রবেশের বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। বর্ষা মৌসুমে প্লাটফর্মেও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়ছে। বিষয়টি প্রকল্প ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে পানি প্রবেশের বিষয়টি সমাধানে ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে ২০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরে এভাবে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের মান নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলছেন।
কক্সবাজার স্টেশনের ভেতরে বৃষ্টির পানি প্রবেশের ঘটনাটি স্বীকার করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স। এ বিষয়ে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আহমেদ সুফি গণমাধ্যমকে বলেন, আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনটির কাঠামো ও নকশা অন্য যেকোনো উঁচু ভবনের চেয়ে আলাদা। স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে এবারই প্রথম ভারী বৃষ্টির মুখোমুখি হয়েছি আমরা। ছাদ থেকে কোনো একটা বা একাধিক লিকেজ দিয়ে ভবনের অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করতে পারে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সজাগ রয়েছি। এরই মধ্যে প্লাটফর্ম ও স্টেশন ভবনে পানি প্রবেশ নিয়ে সৃষ্ট ত্রুটিগুলো সংশোধন করা হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে স্টেশন ভবনটি বুঝিয়ে দেয়ার সময় এ ধরনের ত্রুটি থাকবে না।
স্টেশনটি তৈরি করা হচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে। ছাদ চুইয়ে ভবনে পানি প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক মোহাম্মদ সুবক্তগীন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ের হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেয়া হয়নি। তাছাড়া বৃষ্টির সঙ্গে প্রবল ঝড় হলে এমনিতেও প্লাটফর্মে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে পারে। স্টেশন এলাকার পানি নির্গমনের স্থানে ঘাসের কারণে বৃষ্টির পানি স্টেশনমাস্টারের রুমে প্রবেশ করেছে। এটি সামান্য বিষয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ায় এ ধরনের সংকট আর হবে না।
এ প্রসঙ্গে রেলপথ পরিদর্শন অধিদপ্তরের সরকারি রেল পরিদর্শক মামুনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, প্রায় এক মাস আগে আমরা স্টেশন ইন্সপেকশন করেছি। ওই সময়ে আইকনিক স্টেশন ভবনের অভ্যন্তরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে আমরা ওয়াটারিং সিস্টেমসহ প্লাটফর্মের উচ্চতা বেশি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। ডাবল ডেকার ট্রেন প্রবেশের সুবিধা রেখে প্লাটফর্মের ছাদের উচ্চতা রাখা হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টিতে পানি প্রবেশ করতে পারে। তবে স্টেশন ভবন কিংবা প্লাটফর্মে পানি প্রবেশ মাত্রাতিরিক্ত হলে ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ডের সময়ে সেটি ঠিক করে দেয়ার সুযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথটি ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ট্রেন চলাচল শুরু হয় ১ ডিসেম্বর থেকে। বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে।