বাহারি নাম ও স্বাদের আমের সমাহারে নওগাঁয় শুরু হয়েছে আম মেলা
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
নওগাঁর বিখ্যাত আম ফজলি ও আম্রপালী তো আছেই। আমেরিকান পালমার, লেডিজেন, অস্ট্রেলিয়ার অস্টিন, জাপানের মিয়াজাকি, থাইল্যান্ডের কিং অব চাকাপাত, ব্রুনাই কিং ছাড়াও দেশীয় প্রজাতির ল্যাংড়া, বারি আম-৪, দশেরী, যাদুভোগের মতো বাহারি নাম আর স্বতন্ত্র স্বাদের আমও সাজানো রয়েছে থরে থরে।
এমন বাহারি নাম আর স্বতন্ত্র স্বাদের ১৪০ জাতের আমের সমাহারে নওগাঁয় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী আম মেলা। বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ চত্বর মাঠে এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় এ মেলার আয়োজন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা শাখা।
প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা। এ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। আলোচনা শেষে নওগাঁর সেরা পাঁচজন আমচাষিকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট উপহার দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।
উদ্বোধনের পর মেলা ঘুরে দেখা যায়, কালিয়াভোগ, বান্দিগৌড়, বৃন্দাবনি, মতি আম, চোষা, সোনামুখী, বুলবুলি, কুমড়াজালি, জিলাপি গুটি, লিচু ঝুরি, মহুয়া, সেন্দুরা, রাতারগুল, দুধস্বর, চুউ, রাধাসুন্দরীর মতো বাহারি নামের সব আম সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
মেলায় স্টলে স্টলে ঘুরে বিভিন্ন জাতের আম দেখছিলেন নওগাঁর পৌরসভার পার-নওগাঁ এলাকা থেকে আসা তরুণ আমিনুল ইসলাম। মেলায় বাহারি নামের সব আম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এত দিন আমি আম্রপালি, ল্যাংড়া, ফজলিসহ মাত্র ১০-১২ প্রকার আমের নাম জানতাম। কিন্তু এত জাতের আর এত চমৎকার ও বিচিত্র জাতের আম রয়েছে এটা আমার ধারণা ছিল না। মেলায় এসে নওগাঁর আম সম্পর্কে অনেক নতুন কিছু জানতে পারলাম।’
মেলায় আসা জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষি উদ্যোক্তা ও গবেষক নওগাঁর মান্দায় অবস্থিত শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে যে-সব উন্নত জাতের আমের চাহিদা রয়েছে, সেই সব আম বর্তমানে নওগাঁতে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। ধীরে ধীরে বিদেশের বাজারে নওগাঁর আমের চাহিদা বাড়ছে। অনেক কৃষি উদ্যোক্তা রপ্তানির উদ্দেশ্যে বর্তমানে উত্তম কৃষি চর্চা পদ্ধতি অনুসরণ করে উন্নত জাতের আম চাষ করছেন। কিন্তু সেভাবে এখনও তাঁরা বিদেশের বাজার ধরতে পারছে না। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ জোরদার করতে হবে। বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের আমের ব্র্যান্ডিং বাড়াতে হবে।’
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নওগাঁ থেকে সর্বপ্রথম ২০১৯ সালে বিদেশের বাজারে আম উৎপাদন করা হয়। সেখানে গত বছর এ জেলা থেকে বিদেশের বাজারে আম রপ্তানি হয়েছে ২২১ মেট্রিক টন। এবার আমরা এ জেলা থেকে ১ হাজার মেট্রিক টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজার ছাড়াও চায়নাতেও আম রপ্তানির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির জন্য চায়না সরকারের একটি প্রতিনিধি দল নওগাঁর বিভিন্ন আম বাগান পরিদর্শন করে গেছেন।