কুড়িগ্রামে আলোচিত গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় সোলায়মানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব
সোলায়মানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, বিচার না পেয়ে লজ্জায় স্বামী-স্ত্রীর বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা এবং স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় অন্যতম প্রধান পলাতক আসামি মো. সোলায়মান (২৯) কে যৌথ অভিযানে ১৫ জুন শুক্রবার দুপুরে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১, সিপিএসসি, গাজীপুর এবং র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুর।
এর আগে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে রাজিবপুর পুলিশ। গত শনিবার (১ জুন) দুপুরে অভিযান পরিচালনা করে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ধর্ষণের বিচার না পেয়ে বিষপানে নারীর মৃত্যু, গ্রেপ্তার ২
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- প্রধান আসামি মো. জয়নাল আবেদীন (৪৮) ও আরেক আসামি মো. আলম হোসেন (৪০)। গত ৩১ মে ২০২৪ শুক্রবার রাতে ভুক্তভোগী নারীর মামা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রাজিবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে জয়নাল আবেদীন, মো. আলম হোসেন, শুক্কুর আলী (৫০) ও মো. সোলেমানকে (২৯) আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন: সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় প্রধান আসামির স্বীকারোক্তি, ধরাছোঁয়ার বাইরে পলাতকরা
র্যাব জানায়, আমরা বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বসহকারে দেখেছি। র্যাবের যৌথ অভিযানে পলাতক আসামি মো. সোলায়মান (২৯) গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়াও পলাতক আসামি শুক্কুর আলীকে (৫০) ধরতে তৎপর রয়েছে র্যাব।
এছাড়াও আজ ১৬ জুন ২০২৪ রবিবার সকাল ১১ টায় ঘটিকায় রাজিবপুর উপজেলা সম্মুখ সড়কে রাজিবপুর উপজেলার আশা মনীকে জোরপূর্বক গণধর্ষণ ও তার আত্মহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে রাজিবপুরের সর্বস্তরের জনগণ।
উল্লেখ্য, ভিকটিম আশামনি (২৫) কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর থানাধীন বড়াইডাঙ্গী কলেজপাড়া গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলম এর স্ত্রী গত ২৪ মে ২০২৪ ইং তারিখ বিকাল ৫টার দিকে ভিকটিম আশামনি ও তার স্বামী বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন: গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ লজ্জায় স্বামী স্ত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টায় স্ত্রীর মৃত্যু
পরবর্তীতে ভিকটিমকে চিকিৎসার জন্য চর রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে জামালপুর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ভিকটিমকে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং এই অবস্থায় গত ২৯ মে ২০২৪ তারিখ দুপুরে মৃত্যুবরণ করে। ফলে ভিকটিমের মামা মোঃ আকবর আলী(৫০) চর রাজিবপুর থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ দায়ের করলে অফিসার-ইনচার্জ, চর রাজিবপুর থানার অপমৃত্যু মামলা নং-০৬, তারিখ- ৩০ মে ২০২৪ ইং একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করেন ।
পরবর্তীতে চাঞ্চল্যকর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ভিকটিমের মৃত্যুর মূল রহস্য প্রকাশ্য আসলে র্যাব এবং সাংবাদিক মহলের সহযোগিতায় পুনরায় ভিকটিমের মামা মো. আকবর আলী (৫০) চর রাজিবপুর থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ দায়ের করলে অফিসার-ইনচার্জ, চর রাজিবপুর থানার মামলা নং-০১, তারিখ ০১ জুন ২০২৪ ইং, ধারা-২০০০ সালের নাঃ ও শিঃ নিঃ দমন আইন (সংশোঃ/০৩) এর ৯(১), ৯(৩) তৎসহ ৩০৬ পেনাল কোড-১৮৬০, গণধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা রুজু করেন।
পাশবিক নির্যাতনের শিকার আশামনি (২৫) এর মৃত্যুর পর গোপন অভিও রেকর্ড ভাইরাল হওয়ার ফলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় । অতঃপর জানা য়ায যে, জয়নাল ও তার সহযোগীরা মাসের পর মাস ভিকটিমের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে নির্যাতন করেছে।
ভিকটিমের স্বামী মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রায় ৮-১০ বছর পূর্বে আসামি মো. শুক্কুর আলীর কসাইখানায় কর্মচারী ছিল। সাংসারিক অভাব-অনটনের কারণে আসামি মো. জয়নাল আবেদীনের নিকট হতে ৪০,০০০/- টাকা ধার নেয় জাহাঙ্গীর-আশামনি দম্পতি। উক্ত টাকা নেওয়ার পর কসাইখানার কাজ ছেড়ে ভিকটিমের স্বামী মো. জাহাঙ্গীর আলম টাঙ্গাইল জেলায় কসাইখানায় কাজ নেন।
পরবর্তীতে ধারের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় আসামি মো. জয়নাল আবেদীন ভিকটিমকে অবৈধ সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। ভিকটিমের স্বামী এলাকায় না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রায় ০২ মাস পূর্বে আসামি মো. জয়নাল দুপুরে ভিকটিমের বসত ভিটায় প্রবেশ করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।
উক্ত ঘটনার কিছুদিন পর ০১ নং আসামি মো. জয়নাল, ০২ নং আসামি মো. শুক্কুর আলীকে নিয়ে ভিকটিমের বাড়িতে এসে দুইজনই পুনরায় পাশবিক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে তারা দুইজন আবারও পাওনা টাকার বাহানায় ০৩ নং আসামি আলম ও ০৪ নং সোলায়মানকে (কসাই জয়নালের কর্মচারী) সাথে নিয়ে বাড়িতে এসে সংঘবদ্ধভাবে গণধর্ষণ করে। অতঃপর আসামি মো. সোলায়মান (২৯) গোপনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। বিবাদীগণের পালাক্রমে নির্যাতনের ফলে ভিকটিম অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং উক্ত সংবাদ শুনে তার স্বামী মো. জাহাঙ্গীর আলম টাঙ্গাইল হতে বাড়ি আসে। স্বামী জাহাঙ্গীর আলম স্ত্রীর পালাক্রমে ধর্ষণের কথা লোকমুখে শুনে স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে, ভিকটিম দুইমাসের বেশি সময় যাবৎ পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে জানায়।
পরবর্তীতে সালিশের মাধ্যমে বিচার না পেয়ে গত ২৪ মে ২০২৪ ইং তারিখ বিকালে স্বামী-স্ত্রী লোক-লজ্জার ভয়ে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে বিষ পান করে। উক্ত বিষক্রিয়ায় ভিকটিম মৃত্যুবরণ করেন এবং স্বামী অসুস্থ অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করছেন।