বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় প্রাণ গেল ১১ জনের
প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন নাজেহাল হয়ে পড়েছে। ঠিক এরইমধ্যে দেশের কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। কিন্তু স্বস্তির বৃষ্টির মধ্যে ঘটে গেছে ভয়ঙ্কর ঘটনা। বজ্রপাতে দেশের পাঁচ জেলায় একদিনে নারীসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে কুমিল্লায় চার, রাঙামাটিতে তিন, কক্সবাজারে দুই এবং খাগড়াছড়ি একজন ও সিলেটে একজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।
রাঙামাটি:
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির দুই উপজেলায় বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে রাঙামাটি শহরের সিলেটিপাড়া ও বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপাকারী ইউনিয়নের মুসলিম ব্লকে এবং দুপুরে একই উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের লুইনথিয়ান পাড়ায় এসব বজ্রপাতে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার সিলেটিপাড়া এলাকার বাসিন্দা নজির হোসেন (৫০), বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপাকারী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মুসলিম ব্লক গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী বাহারজান বেগম (৫৫) এবং সাজেক ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের লুইনথিয়ান পাড়ায় বেটলিং মৌজার কারবারি মিথুন ত্রিপুরার বোন তনিবালা ত্রিপুরা (২৫)।
অন্যদিকে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলেন, বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে মোট দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থকে প্রতি পরিবারকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার:
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুই লবণচাষির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কোদাইল্যাদিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া এলাকার জমিরের ছেলে দিদারুল ইসলাম (৩৫) এবং রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়া এলাকার জামালের ছেলে মো. আরমান (২৫)।
মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মগনামার কোদাইল্যাদিয়ায় ভোরে দিদারুল ইসলাম লবণের মাঠ পরিচর্যা করতে গেলে হঠাৎ বজ্রপাত হয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, গতকাল রাতে প্রচুর বজ্রপাত হয়। ভোরেও বজ্রপাত অব্যাহত থাকে। রাতের বৃষ্টিতে লবণের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাষি আরমান তা পরিচর্যা করতে যান। ওই সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
খাগড়াছড়ি:
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ঝোড়ো বাতাসে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাত (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
ইয়াছিন আরাফাত বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ার বাসিন্দা ইউসুফ মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবা ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
জানা যায়, সকালে বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে বাড়ির উঠানের পাশে কাঁচা আম কুড়াতে যায় দুই ভাই। এ সময় সেখানে বজ্রপাত হয়। এতে ছোট ভাই প্রাণে বেঁচে গেলেও বড় ভাই ইয়াছিন আরাফাত ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বলেন, সকালের দিকে বজ্রাঘাতে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ মৃত্যু বড়ই মর্মান্তিক। তাদের পরিবারকে সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা:
কুমিল্লার ৪ উপজেলায় বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার চান্দিনা, বুড়িচং, সদর দক্ষিণ ও দেবিদ্বার উপজেলায় মোট চারজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে দুজন কৃষক বলে জানা গেছে।
নিহতরা হলেন—চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের কিছমত-শ্রীমন্তপুর এলাকার সুন্দর আলীর ছেলে কৃষক দৌলতুর রহমান (৪৭), বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাঁচোড়া এলাকার কুদ্দুস মিয়ার ছেলে কৃষক আলম হোসেন, দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান ও সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম।
নিহত দৌলতের স্বজনরা জানান, বিকেলে চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নে ধানের জমিতে কাজ করছিলেন দৌলতুর রহমান। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বুড়িচং উপজেলায় নিহত আলম হোসেনও কৃষি জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হন। তিনি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাঁচোড়া এলাকার বাসিন্দা।
দেবিদ্বার উপজেলা ও সদর দক্ষিণ উপজেলায় নিহত ২ জনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
সিলেট:
সিলেটের কানাইঘাটে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এক বর্গাচাষি কৃষক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুজন।
বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার দিঘীরপার পূর্ব ইউনিয়নের শফিক হাওরে এ ঘটনা ঘটে।
বজ্রপাতে নিহত বর্গাচাষি দক্ষিণ কুয়রেরমাটি গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে বাবুল আহমদ (৪৮)। বজ্রপাতে ঝলসে গুরুতর আহতরা হলেন- নিহত বাবুলের ভাতিজা ফাহিম আহমদ (১৭) ও মানিকপুর গ্রামের বাবু বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস (১২)।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে স্থানীয় শফিকের হাওরে বর্গা জমিতে বোরো ধান কাটতে যান বাবুল। সঙ্গে ছিলেন ভাতিজা ফাহিম ও প্রদীপ। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঝলসে গিয়ে গুরুতর আহত হন তারা। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বাবুলকে মৃত ঘোষণা করেন।