বেক্সিমকো গ্রুপ, এক সময়ের দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী, বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে ভুগছে। এই সংকটের কারণে শাইনপুকুর সিরামিকস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, প্রতিষ্ঠানটির বন্ধ কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪টিতে।
গত আগস্ট থেকে বেক্সিমকোর কারখানাগুলো কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে না পারায় উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। গাজীপুরের চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে শ্রমিকদের টানা পাঁচ দিনের অবরোধের পর এই সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ২৩টি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা এবং শাইনপুকুর সিরামিকস বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
কারখানাগুলোতে কর্মরত ৪০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে কেউই অক্টোবর মাসের বেতন পাননি। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (অর্থ ও কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) ওসমান কায়সার চৌধুরী জানান, প্রতি মাসে শ্রমিকদের বেতন বাবদ প্রায় ৮০ কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে চলমান আর্থিক সংকটের কারণে এই পরিমাণ অর্থ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করা হলেও, অক্টোবরের বেতন দেওয়ার কোনো উৎস নেই।
বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের গ্রেপ্তার এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন প্রতিষ্ঠানটির সংকটকে আরও গভীর করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির জন্য রিসিভার হিসেবে নির্বাহী পরিচালক রুহুল আমিনকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বিদেশি ক্রেতারা এই রিসিভার নিয়োগকে আর্থিক দেউলিয়াপনার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন, যা বেক্সিমকোর রপ্তানির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বেক্সিমকোর ওপর জনতা ব্যাংকের ২৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে, যার মধ্যে ১৯ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। বিজিএমইএ প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন পরামর্শ দিয়েছেন, শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য প্রতিষ্ঠানটি যেন সম্পদ বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ সরকারের হস্তক্ষেপ চাইলেও বিজিএমইএ ও ইপিবি মনে করেন, সমস্যার সমাধানে প্রতিষ্ঠানটিরই উদ্যোগী হওয়া উচিত।
রিসিভার রুহুল আমিন বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটির আয় ও সম্পদ ব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। একই সঙ্গে কারখানাগুলো পরিদর্শন করে সমস্যার একটি কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা হবে।
বেক্সিমকোর এই সংকট কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়, দেশের অর্থনীতি এবং শিল্প খাতের উপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। শ্রমিকদের জীবনমান রক্ষার পাশাপাশি দেশের রপ্তানি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।