প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপের চাষ তেঁতুলিয়ায়
যেন বিস্তৃত সবুজ গালিচা! তারই ফাঁকে ফাঁকে মাথা তুলে উঁকি দিয়েছে গোলাপি ফুলগুলো। মাঠজুড়ে অপরা সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিয়েছে প্রকৃতি।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া ও শারিয়াল জোত গ্রামের মাঠের সৌন্দর্য এখন এমনই। এখানে প্রথমবারের মতো টিউলিপ ফুলের চাষ করেছেন শারিয়াল ও দর্জিপাড়া গ্রামে ৮ নারী উদ্যোক্তা।
৪০ শতক জমিতে আটজন চাষি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করছেন টিউলিপ ফুল। শারিয়াল জোত ও দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ তিনটি শেড ঘুরে দেখা যায়, বাগানগুলোতে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। শতাধিক গাছে গোলাপি, বেগুনি ও লাল রঙের ফুল ফুটেছে।
এই উদ্যোক্তারা হচ্ছেন দর্জিপাড়ার মুক্তা পারভীন, আনোয়ারা বেগম, সুমি আক্তার ও শারিয়াল জোত গ্রামের আয়শা বেগম, হোসনে আরা বেগম, মনোয়ারা বেগম, মোর্শেদা বেগম ও সাজেদা বেগম।
উদ্যোক্তা মনোয়ারা ও মোর্শেদা জানান, তারা ২০ শতক জমিতে টিউলিপ লাগিছেন। ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা থাকলে এ ফুল চাষ করা সম্ভব। রোপনের প্রায় মাস খানেকের মধ্যেই ফুল ধরতে শুরু করেছে। সীমান্তের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের মতো জায়গায় বিদেশি ফুল চাষ করতে পেরে খুব আনন্দিত তারা। প্রত্যাশিত দাম পাবেন বলে আশাবাদি তারা।
উদ্যোক্তা আয়শা আক্তার বলেন, ‘আমি ৫ শতক জমিতে টিউলিপ লাগিয়েছি। রোপনের প্রায় এক মাসের মাথায় ফুল আসতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলে বিদেশি ফুল চাষ হবে কল্পনাই করতে পারিনি। খুব অভিভূত। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এ ফুল দেখতে আসছে। এ ফুল বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হলে আগামীতে আরও জমিতে এ ফুল চাষ করব।’
বাংলাদেশে ফার্ম আকারে টিউলিপের চাষ এটিই প্রথম। এরই মধ্যে টিউলিপ ফুলের বাগান দেখতে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন বলে জানালেন টিউলিপ চাষিরা। এ ফুল চাষের মাধ্যমে চা শিল্পের মতো টিউলিপ চাষের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে মনে করছেন তারা। ছয়টি ভাইলের ১২ রঙের টিউলিপ চাষ হচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডাচ সানরাইজ (হলুদ), স্ট্রং গোল্ড (হলুদ), বেগুনি প্রিন্স (বেগুনি), ডেনমার্ক (কমলা), রিপে (কমলা), অ্যাড রেম (কমলা), টাইমলেস (লাল সাদা শেড), ইলে দে ফ্রান্স (লাল), লালিবেলা (লাল), বার্সেলোনা (গাঢ় গোলাপি), মিল্কশেক (হালকা গোলাপি)।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ দেশে এখনো ‘টিউলিপ ফুলের চাষ সেভাবে শুরু হয়নি। ফুল প্রেমীরা হয়তো শখের বশে বাড়িতে টবে চাষ করতে পারেন। কিন্তু এরকম বড় পরিসরে টিউলিপ চাষ উত্তরবঙ্গের তেঁতুলিয়ায় প্রথম। এ ফুল চাষে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ। ফুলটি চাষ করতে হলে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে উত্তরের এ উপজেলায় হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার কাছে হওয়ায় কয়েকমাস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে এ অঞ্চলে। শীত অঞ্চল হিসেবে টিউলিপ চাষে বাড়তি সুবিধা রয়েছে। টিউলিপের বাণিজ্যিক চাষ করা যেতে পারে। তবে এদেশে ফুল ফুটলেও পরবর্তীকালে রোপনের জন্য টিউলিপ গাছের বাল্ব সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বাল্ব সংরক্ষণ করতে হয়। তাই এটা টিউলিপ চাষের বড় সীমাবদ্ধতা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস তা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সব ধরনের সেবা দিচ্ছে। আশা করছি পরীক্ষামূলকভাবে এ চাষ সাফল্যের মুখ দেখবে এবং পর্যটন শিল্পের ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগিতায় টিউলিপ চাষ সম্প্রসারণ উপপ্রকল্প বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। টিউলিপ শীত প্রধান অঞ্চলের ফুল। বর্ষজীবী ও কন্দযুক্ত এ ফুল লিলিয়াসিয়ে পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের বেশ কিছু সংকর জাত রয়েছে।
এসএন