পীরগাছায় নিজ মেয়েকে অপহরণের পর গুম: বাবার যাবজ্জীবন
রংপুরের পীরগাছায় নিজের মেয়েকে অপহরণের পর গুমের মামলায় বাবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ বিচারক রোকনুজ্জামান এ রায় দেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কৈকুরি এলাকায় রাবেয়া বেগমকে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে নানা (রাবেয়ার ছেলে) লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন রাঙা মিয়া। দীর্ঘ বাইশ বছর পর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়।
আরও জানা যায়, পীরগাছা উপজেলার মকরমপুর গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে রাবেয়া খাতুন ভালোবেসে বিয়ে করেন একই এলাকার আব্দুর রশীদ নামে এক যুবককে। এ নিয়ে রাবেয়ার পরিবারের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের চরম বিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে রাবেয়ার ভাসুর হোসেন আলী খুন হন।
এ ঘটনায় রাবেয়ার বাবাসহ তার পরিবারের লোকজনদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। মামলায় লুৎফর রহমানসহ অন্য আসামিরা নিম্ন আদালতে খালাস পান। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের একমাত্র সাক্ষি ছিলেন রাবেয়া খাতুন।
রাবেয়া খাতুন অনেক বার বাবা লুৎফর রহমানকে বলেছেন, ‘তার সামনে ভাসুর হোসেন আলীকে হত্যা করা হয়েছে এবং বিষয়টি তিনি উচ্চ আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। ঘটনার পর থেকে লুৎফর রহমান মেয়ে রাবেয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাবেয়াকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কৌশলে পীরগাছার চৌধুরানী বাজার বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যান লুৎফর রহমান ও তার সহযোগীরা। কিন্তু রাবেয়া বাবার মতলব বুঝতে পেরে চিৎকার শুরু করলে বাধ্য হয়ে লুৎফর রহমান রাবেয়াকে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যান। এরপর থেকে রাবেয়ার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পরে রাবেয়ার ছেলে রাঙ্গা মিয়া প্রথমে থানায় জিডি এবং পরে মামলা করতে যান। কিন্তু থানা মামলা না নেওয়ায় আদালতে নালিশি মামলা করেন রাঙ্গা মিয়া। আদালত মামলাটি এজাহারভুক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন।
থানা পুলিশ তদন্ত শেষে বাবা লুৎফর রহমানসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে এক আসামি মারা যান। মামলায় ১৪ সাক্ষির সাক্ষ্য ও জেরা শেষে আসামি লুৎফর রহমানকে দোষি সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও অপর আসামিদের খালাস দেওয়া হয়।
সরকার পক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিশেষ পিপি জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর চাঞ্চল্যকর একটি মামলার রায় হয়েছে। রায়ে প্রধান অভিযুক্ত সাজা পেলেও অপর আসামিরা খালাস পেয়েছেন।’
বাদীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানান তিনি।
জিএমএ/এমএসপি