‘স্বামী-সন্তানদের কাছে না পেয়ে মুখে ভাত উঠে না’
ছবি: সংগৃহীত
‘আমি বিএনপির রাজনীতি করি, দলের পদে আছি। কিন্তু আমার স্বামী কোনো দল করে না। একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। তারপরেও তাঁকে নাশকতার মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমিও পলাতক। আজকে আমার ব্যবসায় তালা। বাসায় তালা। ছেলে ঢাকাতে পড়াশোনা করছে। তাঁর লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারছি না। আমার মতো আজকে দেশের হাজার হাজার মা-বোনের এই সমস্যা। স্বামী-সন্তানদের কাছে না পেয়ে মুখে ভাত উঠে না।’
রোববার (১০ ডিসেম্বর) কেডির মোড় দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্যে এসব কথা বলেন নওগাঁ পত্নীতলা উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম বেগম শেফা।
মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হয় বেলা ১১টার দিকে এই মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হয়। দুুপুর ১২টা পর্যন্ত এই মানববন্ধন কর্মসূচি চলে। কর্মসূচিতে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম। মানববন্ধনে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান, জেলা অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাক, জেলা মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামিনা পারভীন, সাধারণ সম্পাদক শবনম মুস্তারীসহ গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের স্বজনরা বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপার্সানের উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ খান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইকরামুল বারী টিপু ও সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
জেলা অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির মহাসমাবেশের আগে ও পরে নওগাঁয় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর অন্তত ২০টি মামলা হয়েছে। সবগুলো মামলাই ভিত্তিহীন। এসব মামলায় গত দেড় মাসে জেলায় ২৫০ থেকে ৩০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং জামিন না দেওয়া চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
জেলা মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামিনা পারভীন বলেন, ‘আমার বাবা, চাচা ও চাচাতো ভাইসহ আমার পরিবারে সাতজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার বাবা-চাচারা যে বাংলাদেশের স্বপ্নে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছিল, আজকে তাঁদের সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে।আজকে দেশের মানুষের মানবাধিকার নেই। ভোটের অধিকার নেই। দেশের মানুষের মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার রক্ষার যে লড়াই শুরু হয়েছে এটা আরেকটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে।’
জেলা বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় আজকে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছে না। সমস্ত দেশটা আজকে একটা কারাগারে পরিণত হয়েছে। বিএনপি শুধু তাদের নেতাকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য লড়ছে না। সারা দেশের মানুষের মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার রক্ষার লাড়াই করছে। এই লড়াইয়ে অবশ্যই জিততে হবে।’
দেড় মাস পর বিএরপির কার্যালয়: বিএনপির এই মানববন্ধন কর্মসূচিকে ঘিরে নেতাকর্মীদের পদচারণে মুখর হয়ে নওগাঁ জেলা বিএনপির কার্যালয়। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশের কয়েক দিন আগ থেকে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু করলে নওগাঁ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে কাউকে আসতে দেখা যায়নি। প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির কার্যালয়টিতে তালা ঝুলে ছিল।