রাজৈরে নবজাতকের মৃত্যু, হাসপাতাল ঘেরাও
মাদারীপুর রাজৈরের ‘টেকেরহাট সেফ ডেলিভারি হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার’-এ চিকিৎসার অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে প্রসূতির আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসী।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টার দিকে ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসী হাসপাতালটি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে রাতেই রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক এবং রাজৈর-শিবচরের সার্কেল এসপি আনিসুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা চলে যান।
এ বিষয়ে প্রসূতি জেসমিন বেগমের স্বামী রাকিব বলেন, ‘আমার স্ত্রী জেসমিন বেগমের প্রসব বেদনা ওঠে। রবিবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে রাজৈরের ‘টেকেরহাট সেফ ডেলিভারি হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার’-এ নিয়ে আসি। সেখানে ৮ হাজার ৪০০ টাকার চুক্তিতে ভর্তি করেন হসপিটালের মালিক হাফিজা আক্তার রত্না। রাত ১২টার দিকে হাফিজা আক্তার রত্না ও তার স্বামী আবুল হোসেন মিলে আমার স্ত্রীর নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন করেন।’
রাকিব আরও বলেন, ‘এ সময় আমার বাচ্চার শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু হসপিটাল কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নিয়েই পরের দিন আমার স্ত্রীকে হসপিটাল থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। ওই দিন রাত ১০টার দিকে আমার বাচ্চা মারা যায়।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ওই হসপিটালে কোনো ডাক্তার ছিল না। আমার বাচ্চার মৃত্যুর বিচার চাই। আমার বাচ্চার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত ১টার দিকে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী হসপিটাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। এসময় পুলিশ এসে আমাদের বিচারের আশ্বাস দিলে আমরা চলে আসি।’
এ ব্যাপারে হাসপাতালের মালিক হাফিজা আক্তার রত্না জানান, শিশুটিকে তারা সুস্থ অবস্থায় বাড়ি নিয়ে গেছে। হয়ত ওষুধ খাওয়াতে ভুল করেছে। সেজন্য শিশুটির মৃত্যু হতে পারে।
এ ব্যাপারে রাজৈরের ‘হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সমিতি’র সভাপতি জাকির হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘ঘটনা জেনেছি। ডাক্তার ছাড়া প্রসূতির ডেলিভারি করানো কাম্য নয়।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মনির আহমেদ খান জানান, সংশিষ্ট বিষয়ে অপ্রশিক্ষিত বা সনদবিহীন ব্যক্তি এ কাজ করে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সনদবিহীন ব্যক্তিদের এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, রাজৈর উপজেলায় প্রায় ২৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল রয়েছে। ২-৩টি ছাড়া এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে কাগজে-কলমে নিয়োগ দেয়া থাকলেও সার্বক্ষণিক এমবিবিএস ডাক্তার বা প্রশিক্ষিত নার্স থাকে না। রাজৈরের ‘টেকেরহাট সেফ ডেলিভারি হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ এর একই অবস্থা। কোনো চিকিৎসক নেই। ওই হাসপাতালের মালিক হাফিজা আক্তার রত্না ও তার স্বামী আবুল হোসেন মিলেই ডেলিভারির কাজ করেন।
এএসএ/এমএসপি