ভুয়া ঠিকানায় সরকারি চাকরি নেওয়ার অভিযোগ, পেয়েছেন পদোন্নতিও
বরগুনায় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারি চাকরি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মো. সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে। তিনি সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পেয়ে গত ৫ বছরে পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে তালতলী উপজেলায় উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমানের সময়ে ২০১৭ সালের ৯ জুন বরগুনা জেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য কয়েকটি শুন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বরগুনা জেলা প্রশাসন। পটুয়াখালী জেলার টাউন বহালগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা হয়েও প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদন করেন মো. সাইদুর রহমান।
নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পান তিনি। সাইদুর রহমান আবেদনে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেন বরগুনা সদরের আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের কদমতলা গ্রাম। যা শুধু ওই ইউনিয়নের অনলাইনের একটি বালামে ছাড়া বাস্তবে নেই।
আবেদন ও নিয়োগে সাইদুরের উল্লেখিত স্থায়ী ঠিকানা নিয়ে অনুসন্ধান করে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড কদমতলা গ্রামের কেউই মো. সাইদুর রহমান ও তার বাবা আবদুল জলিল সিকদার এবং মা মমতাজ বেগম নামের কাউকে চিনতে পারেননি। এমনকি ওই ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশও এই নামের কোনো স্থায়ী বাসিন্দাদের চিনতে পারেননি। এরপর ৫নং আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের হিসেব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর অনলাইনে খুঁজে ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে সাইদুরের কোনো জন্মনিবন্ধন পাননি। তবে ১২নং বালামে তার নাম পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য কাজী মোকলেস বলেন, আমার ৬৫ বছর বয়সে এই নামের এই ওয়ার্ডে এমন কোনো লোক বা পরিবারকে চিনি না। আর যে জন্মসনদ বানানো হয়েছে সেটা আমার আগের ইউপি সদস্যের সময়ের।
এ বিষয়ে আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য এনায়েত হোসেন বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না এবং কীভাবে এই এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে তাও অবগত নই। তখনকার চেয়ারম্যান জানতে পারেন।
আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার আশরাকুর রহমান ফিরোজের কাছে জানতে চাইলে তিনিও সাইদুরকে চিনতে পারেননি। তিনি বলেন, অনিয়ম দুর্নীতি হতেই পারে। আমার কাছে একটি কাগজ আসত তিন হাত ঘুরে। তাই হয়তো আমি স্বাক্ষর দিয়েও থাকতে পারি। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে স্থায়ী ঠিকানা বানিয়ে চাকরি নিয়েছে কি না বিষয়টি যাচাই হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ওই সময়ে আমি চেয়ারম্যান না থাকায় এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে স্থায়ী ঠিকানার ভুয়া তথ্য দিয়ে অন্য জেলার কেউ চাকরি নিলে বরগুনা জেলার কেউ চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটার সঠিক তদন্ত করা উচিত।
বরগুনা জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, এখানে অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। এই অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে যে তার চাকরি হবে সে কারণেই তিনি বরগুনায় স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে জাল জন্মনিবন্ধন তৈরি করেন। এই ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি না হলে নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী বরগুনা জেলার কারও না কারও চাকরি হতো। আমরা এই দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তালতলী উপজেলা পরিষদের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, আমার বাড়ি আয়লা পাতাকায়। আর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই করেই আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। তার কাছে পটুয়াখালীর টাউন বহালগাছিয়া গ্রামে বর্তমান ঠিকানা কেন প্রশ্ন করলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে চান না বলে জানান।
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার টুম্পা বলেন, ভুল তথ্য দিয়ে চাকরি নিয়েছেন কি না আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে তদন্তের কথা বলা হয় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী প্রমাণিত হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে জানাব।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এসজি