সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা: উপকূলে ফিরে এসেছেন জেলেরা
কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সাগরে মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শনিবার (২০ মে) থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এ জন্য এরই মধ্যে উপকূলে ফিরে এসেছে কক্সবাজারের লক্ষাধিক জেলেসহ সারাদেশের ১০ লক্ষাধিক জেলে।
১৯টি উপকূলীয় জেলার ১০ লাখেরও বেশী জেলে নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
এ ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান (সামুদ্রিক শাখা) মুহাম্মদ তানভীর হোসেন চৌধুরী বলেন, ২০ মে থেকে সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। সাগরে মাছ সংরক্ষণ ও প্রজননের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সাগরে মাছ ধরার জন্য যে অনুমতি দেওয়া হয় শনিবার মধ্যরাত থেকে তা বন্ধ হয়ে যাবে। ২০১৪ সাল থেকে এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আরও জানা গেছে, সুন্দরবন অঞ্চলে জুন, জুলাই, আগস্ট-এই তিন মাস মাছ ধরাসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকার সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এই অঞ্চলে অতিরিক্ত ১২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলার মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান জানান, লক্ষাধিক জেলে দুই মাস ৫ দিনের জন্য সাগর থেকে উঠে এসেছেন কূলে। এর মধ্যে জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৭৬৪ জন। এসব জেলেদের সরকার খাদ্য ও নগদ টাকা বিতরণ করেন প্রতি বছর। এই বছরও তাই করা হবে।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে সমুদ্র থেকে উপকূলে চলে এসেছে সকল মাছ ধরার ট্রলার। নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিন জেলেরা জাল বুনন, জাল টোনা ও বোট মেরামত করে এই সময় পার করে দিবেন।
এদিকে কক্সবাজার মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির নেতারা বলেন, এই ৬৫ দিন জেলেদের প্রণোদনা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ জেলেরা অন্য কোনো পেশায় অভ্যস্ত নয়। এসব দরিদ্র মানুষের কথা ভুলে গেলে চলবে না। অনেক জেলে পরিবার আছে একজনের আয়ের উপর দিয়ে চলে ৭-৮ জনের সংসার। আবার জেলেদের প্রণোদনার খাদ্য ও নগদ অর্থ লোপাট হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। তাই এই কাজে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, জনপ্রতিধির পাশাপাশি মৎস্যজীবী নেতাকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ার জেলে আবুল কালাম বলেন, নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে আমাদের আর্থিক সংকট তৈরি হবে। যার কারণে সরকারি প্রণোদনা বৃদ্ধির পাশাপাশি সকল জেলেদের কাছে সহায়তা পাঠানো দরকার। বছরে কয়েকবার সাগরে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। যার ফলে আমাদের টাকা-পয়সাও জমা থাকে না। এ ছাড়াও ঋণের বোঝা রয়েছে।
এর আগে ১১ মে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মন্ত্রী বলেছিলেন, সামুদ্রিক মাছের প্রধান প্রজননকালে ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে মাছের নির্বিঘ্নে প্রজনন নিশ্চিত করে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করা। এ সময় সব বাণিজ্যিক মৎস্য ট্রলারের সমুদ্রে যাওয়া বন্ধ রাখা হবে। যান্ত্রিক ও আর্টিসানাল মৎস্য নৌযান ঘাটে বাঁধা থাকবে। স্থানীয় প্রশাসন, নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড ও সশস্ত্র বাহিনী মাছ ধরা বন্ধ রাখার কাজে সহায়তা করবে।
ওই সভায় ১২টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তার মধ্যে রয়েছে-সমুদ্রযাত্রার প্রবেশপথগুলোতে নজরদারি জোরদার করা, মৎস্য নৌযানের সমুদ্রযাত্রা শতভাগ বন্ধ নিশ্চিত করা, দেশের সমুদ্রসীমায় বিদেশি নৌযানকে মৎস্য আহরণে বিরত রাখা, নৌযান নোঙর স্থলে আবদ্ধ রাখা, সমুদ্রের তীরবর্তী বরফ কলগুলো সীমিত পর্যায়ে চালু রাখা, মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের সমুদ্র তীরবর্তী মাছ অবতরণ কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা, সব মাছ ধরার নৌযানকে পর্যায়ক্রমে ট্র্যাকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা, সাগরে মাছ ধরায় নিয়োজিত থাকা সব নৌযানকে ১৯ মে‘র মধ্যে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা।
এসআইএইচ