সুঁই-সুতায় জীবন বোনেন মর্জিনা
নকশি কাঁথার বুননে বেঁচে আছেন মর্জিনা (৩৮)। সুঁই-সুতায় কাঁথা নয় যেন জীবন বোনেন তিনি। বড় মেয়েকে নিয়ে মাসে দুটি নকশি কাঁথা সেলাই করে দেড় থেকে দু’হাজার টাকা আয় হয় তার। তাই দিয়ে অসুস্থ স্বামীসহ সংসারের চারজনের জীবন চলে খেয়ে না খেয়ে!
স্বামী অসহায়। সংসারে উপার্জনের মতো আর কোনো মানুষ নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, মাঘের হাঁড় কাঁপানো শীতে একটি কম্বলও নেই তাদের! এমন মানবেতর জীবন-যাপন করলেও ভাগ্যে জোটেনি সরকারি-বেসরকারি সহায়তা।
সংগ্রামী এই নারীর বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর-গোরকমন্ডল গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের দিনমজুর আব্দুল ছালামের স্ত্রী। দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে সাবিনা আক্তার ও ছোট ছেলে আনিচুর রহমান। মামা শ্বশুর আব্দুল হামিদ তার ৫ শতক জমিতে তাদের থাকতে দিয়েছেন। সেখানে কোনোরকমে টিনের ছাপড়া ঘর তুলে বাস করছেন তারা।
অসুস্থ স্বামী কর্মক্ষম হয়ে পড়ায় সংসারের দায়িত্ব মর্জিনার কাঁধে। এ দিকে টাকার অভাবে স্বামীর চিকিৎসা করাতে না পেরে মর্জিনার হতাশায় দিন কাটছে। অভাবের কারণে বড় মেয়ে সাবিনা আক্তার চতুর্থ শ্রেণীর পরে লেখাপড়া করতে পারেনি। ছোট ছেলে আনিচুর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। অভাবের তাড়না যে কোন সময় ছেলের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম রয়েছে। এই শিশু বয়সেই সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানান মা মর্জিনা বেগম।
মর্জিনা বেগম বলেন, ‘অভাবের কারণে মেয়েটার পড়াশুনা বন্ধ রয়েছে। মা-মেয়ে মিলে মানুষের কাঁথা সেলাই করি। এ্যাকনা কাঁথা সেলাই করে পাই ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। মাসে দুখ্যান কাঁথা সেলাইয়ের কাজ পাই। কোন মাসে এ্যকান। এতে যা আয় হয় তা দিয়া কোনোরকমেই দু-মুঠো ডাল-ভাত জোটে। ঘরে অসুস্থ স্বামী। মাঝে-মধ্যে স্বামীর মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। আমি নিজেও অসুস্থ। খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারছি না। ছোট ছেলেটার পড়াশুনার খরচ চালানো খুব কষ্টকর। ছেলে-মেয়ের ভালো জামা-কাপড় কিনেও দিতে পারি না। ময়লা পুরাতন জামা-কাপড় পড়েই থাকে। কোনো সাহায্য সহযোগিতাও পাই না। হাঁড় কাঁপানো শীতেও কেউ এ্যাকান কম্বল দেয়নি বাহে ! খুব কষ্টে বেঁচে আছি।’
স্থানীয় ছাইদুল ইসলাম ও বেলাল মিয়া জানান, পরিবারটি খুব অসহায়। থাকেন মানুষের বাড়িতে। স্বামী-স্ত্রী দুজনে অসুস্থ। তারপরেও জীবন-জীবিকার তাগিদে অসুস্থ শরীরে মর্জিনা বেগম তার মেয়েসহ কাঁথা সেলাই করে কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। এই ঠান্ডায় কেউ তাদের এ্যাকান কম্বলও দেয়নি বাহে! খুব কষ্ট লাগে। আমরা এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলী বলেন, ‘আপাতত আজকালের মধ্যে ঐ অসহায় পরিবারটিকে শীত নিবারণের জন্য কম্বল দেওয়া হবে।’ সামনে কোনো বরাদ্দ এলে মর্জিনার পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার আশ্বাস দেন চেয়ারম্যান।
/এএন