২ দিন ধরে নওগাঁ-বগুড়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস নামানোকে কেন্দ্র করে দুই জেলার বাসমালিকদের দ্বন্দ্বে দ্বিতীয় দিনের মতো নওগাঁ-বগুড়া রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোনো ঘোষণা ছাড়াই বুধবার (৩ মে) সকাল থেকে এ রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) দুপুর ৩টার দিকে নওগাঁ শহরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, হানিফ, একতা, বরেন্দ্র এক্সপ্রেসসহ ১০ থেকে ১২টি পরিবহনের বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ আছে। তবে কিছু কিছু কাউন্টার খোলা থাকলেও বাসস্ট্যান্ডে খুব বেশি বাস না থাকায় সেখানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বাসস্ট্যান্ডে বাস না পেয়ে অনেক যাত্রী অটোরিকশা কিংবা ইজিবাইকে করে বগুড়ার সান্তাহারে যাচ্ছেন।
নওগাঁ ও বগুড়া বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ বাসমালিক সমিতির নওগাঁ-ঢাকা ও নওগাঁ-চট্টগ্রাম রুটে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস নামের নতুন তিনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস নামানোকে কেন্দ্র করে নওগাঁ ও বগুড়া জেলা বাস মালিক সমিতির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ দ্বন্দ্বের জেরে নওগাঁ জেলার বাসমালিকদের আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন বগুড়ার বাসমালিকরা। এর প্রতিবাদে নওগাঁর বাসমালিকরাও নওগাঁ-বগুড়া রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বগুড়ার বাসমালিকদের বাস নওগাঁর পরিবর্তে বগুড়ার সান্তাহার পর্যন্ত চলাচল করছে। অন্যদিকে নওগাঁ এবং দেশের অন্যান্য জেলার বাসমালিকদের কিছু বাস বগুড়ার পরিবর্তে নাটোর হয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করছে।
এদিকে দুই জেলার মালিকদের বিরোধে নওগাঁ-বগুড়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ছোট ছোট যানে কেউ কেউ ৪ কিলোমিটার দূরে বগুড়ার সান্তাহার গিয়ে বাস ধরছেন। আবার অতিরিক্ত পথ অতিক্রম করে নওগাঁ-নাটোর রুট হয়ে দূরের গন্তব্যে যাত্রা করছেন অনেক যাত্রী।
গাজিপুর ভাওয়াল ভদ্রে আলম সরকারি কলেজে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আবু তালহা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলাম। আগামীকাল পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চাকরির পরীক্ষা আছে। আজকেই ঢাকা যেতে হবে। কিন্তু তড়িঘড়ি করে পোরশা থেকে ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি অধিকাংশ পরিবহনের বাস এখান থেকে চলছে না। কোনো পরিবহনের বাস কাউন্টার খোলা নেই, এখানে বাস না পেয়ে সান্তাহারে গিয়ে ট্রেনের টিকিট পেলে ট্রেনে যাব। তা না হলে সান্তাহার থেকে অন্য কোনো বাসে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে।
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যাংকার লিটু নামের চট্টগ্রামগামী এক যাত্রী। কোথায় যাবেন জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, আরে ভাই, আর যাওয়া। গতকালই কুমিল্লা থেকে নওগাঁয় এসেছি। আজকে বাস টার্মিনালে এসে দেখি সব বাস কাউন্টার বন্ধ। সান্তাহার থেকেও ট্রেনের কোনো সিট পাচ্ছি না। বাসমালিকদের দ্বন্দ্বে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের।
তনয় এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার শিপন মোল্লা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বগুড়া মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের বাধার মুখে ঈদ ফেরত যাত্রীদের সুবিধার্থে নওগাঁ নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে ঢাকা চলাচল করতে হচ্ছে। এতে যাত্রীদের কষ্ট হলেও মেনে নিচ্ছে।
বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা বাসমালিক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার বাসমালিকদের অত্যাচারে নওগাঁ সাধারণ যাত্রীরা অতিষ্ঠ। তাদের জেলার উপর দিয়ে আমাদের যেতে হয় বলে তাদের অনেক অন্যায় আবদার আমাদের মেনে চলতে হয়। ঈদের আগে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস পরিবহন নামে নওগাঁ জেলা বাস মালিক গ্রুপের তিনটি এসি বাস নওগাঁ-ঢাকা ও নওগাঁ-চট্টগ্রাম রুটে আমরা ছাড়ি। কিন্তু মঙ্গলবার হঠাৎ বগুড়ার বাসমালিকদের লোকজন আমাদের বাস আটকে দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া বাসমালিকেরা আমাদের বলেন, নওগাঁ-ঢাকা ও নওগাঁ-চট্টগ্রাম রুটে নতুন কোনো এসি বাস তারা চলাচল করতে দেবেন না। এর প্রতিবাদে আমরাও নওগাঁ থেকে বগুড়ার মালিকদের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। এ বিষয়ে একটা সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নওগাঁ-বগুড়া রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
বগুড়ার বাসমালিকদের অত্যাচারে নওগাঁর সাধারণ যাত্রীরা অতিষ্ঠ। এ বিষয়ে শাহ্ ফতেহ্ আলী বাসের মালিক আমিনুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হয় ঢাকাপ্রকাশ-এর। তিনি বলেন, আমরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে থাকি, যাতে কোনো যাত্রীর অসুবিধা না হয়। আমরা যদি যাত্রীদের অত্যাচার করে থাকি তাহলে এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার এবং আমরাও এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই। এতে করে সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, জনগণের যে ভোগান্তি হচ্ছে এটা কাদের অবহেলায় হচ্ছে ,আপনারাই খোঁজ নিয়ে দেখেন। এসব বিষয় নিয়ে আমরা সব সময় সমঝোতায় আসতে রাজি আছি। কিন্তু নওগাঁ বাস মালিক সমিতি আমাদের বাস চালাতে দেবে না। আমাদেরকে না জানিয়ে হঠাৎ করে তারা তিনটি এসি বাস চালু করেছে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এখন আমরাও তো সাপাহার থেকে দুটি বাস চালু করার দাবি করতেই পারি। অথচ নওগাঁর বাস মালিক সমিতি সেটাতে রাজি নয় বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, নওগাঁ-বগুড়া রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধের বিষয়টি জানার পর আমরা বাসমালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ সমস্যার একটা সুষ্ঠু সমাধানের জন্য প্রশাসন চেষ্টা করছে। আশা করছি, খুব শিগগির আবার বাস চলাচল শুরু হবে।
এসজি