আড়াই বছর ধরে সাড়ে ১৯ কোটি টাকার রাবার ড্যাম নষ্ট
নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় শুটকিগাছা এলাকায় আত্রাই নদীতে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যামটি শুষ্ক মৌসুমে কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। কৃষকদের অভিযোগ, প্রায় আড়াই বছর ধরে রাবার ড্যামটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এর ফলে উজান এলাকার কৃষকেরা আত্রাই নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছে না। এ বিষয়ে কৃষকরা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে বারবার লিখিত অভিযোগ করলেও গত আড়াই বছরেও র্যাবার ড্যামটি সংস্কার করা হয়নি।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের শুটকিগাছা এলাকায় নির্মিত সেতু সংলগ্ন রাবার ড্যামটির রাবার ব্যাগ চলমান বোরো মৌসুমে ছয় ফুট পর্যন্ত ফোলানোর কথা থাকলেও সেটি ফোলানো নেই। এর ফলে র্যাবার ড্যাম থেকে নদীর উজান অংশে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা নদীর তীরে ও নিজেদের জমিতে বোরিং করে ধান ও সবজি ক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নওগাঁয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি ধরে রেখে সেই পানিকে কৃষিসহ নানা কাজে ব্যবহারের জন্য আত্রাই উপজেলার শুটকিগাছা এলাকায় ২০১২ সালে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে র্যাবার ড্যাম নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এরপর বেশ কয়েকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও পাল্টানো হয়। ২০১৭ সালে রাবার ড্যামটি বুঝিয়ে দেওয়া হয় স্থানীয় একটি পরিচালনা কমিটিকে। নদীর তলদেশে কংক্রিট ঢালাই দিয়ে বসানো হয় শক্ত রাবার ব্যাগ। মেশিনের সাহায্যে এসব ব্যাগে পানি ভরার মাধ্যমে ফুলিয়ে তোলা হয় শুষ্ক মৌসুমে। ফলে নদীর এক পাশে তৈরি হয় জলাধার। সেই জলাধার থেকে লো লিফট পাম্পের (এলএলপি) সাহায্যে কৃষকেরা জমিতে সেচ দিতে পারে। র্যাবার ড্যামটি নির্মাণের পর ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে রাবার ড্যাম ব্যবহার করে উপজেলার আহসানগঞ্জ, হাটকালুপাড়া ও কালিকাপুর, মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ও কশব ইউনিয়নের কৃষকরা আত্রাই নদী থেকে পানি তোলে জমিতে সেচ দিতে পেরেছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালে শুষ্ক মৌসুমে রাবার ড্যামটি সচল করতে গিয়ে রাবার ব্যাগের বিভিন্ন জায়গায় ফুটোসহ ড্যামটিতে নানা ত্রুটি ধরা পড়ে। এর পর থেকে র্যাবার ড্যামটি অকেজো হয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা কৃষকরা জানান, নদী থেকে জমিতে সেচের পানি দেওয়ার জন্য এই রাবার ড্যামটি তৈরি করা হয়েছিল। তবে প্রায় আড়াই বছর ধরে এটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। র্যাবার ড্যামটি অকেজো হয়ে থাকায় নদীর উজান অংশে নদীতে দেখা দেয় পানি শূন্যতা। ফলে কৃষকরা কম খরচে নদী থেকে জমিতে পানি সেচ দেওয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নদীর পানি ব্যবহার করতে না পেরে তারা অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে বিভিন্ন ফসলি মাঠে ও নদীর তীরে একাধিক স্থানে বোরিং করে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনের সাহায্যে জমিতে সেচ দিয়ে চাষাবাদ করছেন। এতে করে ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের বেওলা গ্রামের একটি মাঠে আত্রাই নদের পাশে ডিজেলচালিত সেচ পাম্প দিয়ে জমিতে সেচ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ওই গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, বোরো লাগানোর সময় প্রথম দিকে তিনবার নদীর পানি তুলে সেচ দিতে পেরেছেন। কিন্তু গত দেড় মাস ধরে নদীতে কোনো পানি নেই। বাধ্য হয়ে জমিতে বোরিং করে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তুলে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে।
নওগাঁয় চলতি মৌসুমে ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ নদীতে ১৯৬টি এলএলপি পাম্প বসিয়েছে। তবে শুটকিগাছা রাবার ড্যামটি বিকল হওয়ায় নদীর পানি দ্রুত নেমে যায়। ফলে নদীর উজান অংশে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। নদীর উজার অংশে পানি না থাকায় এসব সেচ পাম্পের বেশিরভাগই ব্যবহার হচ্ছে না।
এ বিষয়ে শুটকিগাছা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন বলেন, সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ড্যামটি মাত্র দুই মৌসুম ব্যবহার করা গেছে। তৃতীয় মৌসুমে ব্যবহার করতে গিয়ে দেখা যায় ড্যামটি নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর একাধিকবার জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে আমরা লিখিতভাবে ড্যামটি ঠিক করার জন্য আবেদন জানিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
এ প্রসঙ্গে নওগাঁর বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক স্থানে নদীতে পানি না থাকায় নদীতে যেসব এলএলপি আছে সেগুলো অনেকগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে শুটকিগাছা রাবার ড্যামটি নষ্ট থাকায় বেশ কয়েকটি এলএলপিতে পানি যাচ্ছে না। ড্যামটি সংস্কার করার জন্য জেলা উন্নয়ন সভায় একাধিকবার বিষয়টি উত্থাপন করেছি। এ বিষয়ে এলজিইডির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নওগাঁর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল হোসেন বলেন, রাবার ড্যাম সচল করতে ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদারও নির্বাচন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেই ড্যামটির সংস্কার কাজ শুরু হবে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী শুষ্ক মৌসুমে কৃষকরা এর সুফল পাবেন।