আওয়ামী লীগ নেতার ঘোষণায় বাড়ল ভাড়া, যাত্রীদের ক্ষোভ

পরিবহনে সরকার নতুন করে যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি করেনি, অথচ চলতি মাসের শুরু থেকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের বিভিন্ন সড়কে ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আজহারুল ইসলাম আজাহার। ফলে ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
ভাড়া বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাববকরা বিপাকে পড়েছেন, অন্যদিকে সিএনজি-অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে তর্কে জড়াচ্ছেন যাত্রীরা। নানা অজুহাতে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া বৃদ্ধি করছে বলে অভিযোগ তাদের।
জানা যায়, গত সোমবার মহান ১ মে দিবস ছিল। মে দিবসে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও সিএনজি-অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও উপজেলা
আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম আজাহার দেড়গুণ ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দেন।
তার ঘোষণা অনুযায়ী, ভূঞাপুর থেকে গোবিন্দাসী টি-রোড, স্কুল রোড ও বটতলা আগের ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এখন ৫ টাকা বৃদ্ধি করে ১৫ টাকা করা হয়েছে, মাটিকাটা ১৫ টাকার ভাড়া এখন ২০ টাকা, ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাথাইলকান্দি বাজার ও রেলস্টেশন পর্যন্ত ৩০ টাকার ভাড়া ১০ টাকা বৃদ্ধি করে এখন ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ভূঞাপুর থেকে এলেঙ্গার ভাড়া আগে ছিল ৩০ টাকা। তা বৃদ্ধি করে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই রোডে আগে ২৫-৩০ টাকায় এলেঙ্গা যাওয়া যেত। ভূঞাপুর থেকে নলিন ও ফলদার ভাড়া ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এখানেও ১০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করে ৪০ টাকা করেছে। ঘাটাইলের ভাড়া বৃদ্ধি না করা হলেও আগামীতে বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ারও কথা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাথাইলকান্দি স্কুলশিক্ষক হাসান মাহমুদ বলেন, পাথাইলকান্দি বাজার থেকে ভূঞাপুরের ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। গতকাল সিএনজিতে উঠতেই সিএনজিচালক জানালেন ভাড়া ৪০ টাকা। এর আগে ২৫ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা করেছিল। এভাবে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো মানেই হয় না। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ভাড়া বৃদ্ধি করাটা সমুচিত হয়নি। এই ভাড়া বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি করছি।
কলেজছাত্রী সুমাইয়া খাতুনের সিংগুরিয়া থেকে ভূঞাপুরে দিনে দুই বার যাতায়াত করতে হয়। তিনি জানান, সিংগুরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে আগে ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ডের ভাড়া নিত ১০ টাকা। দু’দিন ধরে ৫ টাকা ভাড়া বেশি নিচ্ছে। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে চালকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, নেতারা ভাড়া বৃদ্ধি করেছে।
সিএনজিচালক রফিকুল ইসলাম ও ইমরান জানান, সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না হলেও সিএনজির যাবতীয় যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। যার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা সিএনজি-অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আজহারুল ইসলাম আজাহার ভাড়া বৃদ্ধির যুক্তি তুলে ধরে মুঠোফোনে জানান, গ্যাসসহ দেশে সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দেড় বছর আগে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সেই আগের ভাড়ায় তাদের পোষে না।
সরকার নতুন করে ভাড়া বৃদ্ধি করেনি, তাহলে আপনারা কেন ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলেন- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন জানান, সরকার নতুন করে সড়ক পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো ঘোষণা বা প্রজ্ঞাপন দেয়নি। স্থানীয় সিএনজি-অটোরিকশা শ্রমিক সংগঠন থেকে ভাড়া বৃদ্ধির যে ঘোষণাটি দিয়েছে তা অন্যায় ও অনিয়মতান্ত্রিক। বিষয়টির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর- গোপালপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনির বলেন, ভূঞাপুরে সিএনজি ও অটোরিকশার ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে পেরেছি। শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসজি
