জমির উর্বর মাটি তুলে নেওয়া হচ্ছে ইট ভাটায়!
স্থানীয় কৃষককে সার কিনে দেওয়ার কথা বলে ফসলি জমির উর্বর মাটি (টপ সয়েল) তুলে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ইট ভাটায়! ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার হরিরাম বাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় মাতবররা একমাস ধরে এভাবে উর্বর মাটি বিক্রি করে আবাদি জমির বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভেকু (এক্সক্যাভেটর) চালক।
মাতবররা অনেক ক্ষমতাধর বলে জানা গেছে। ফসলী জমি টপ সয়েল কাটা বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় কয়েকজন। মাতবরদের ক্ষমতার দাপটে তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতেও ভয় পান।
সরেজমিন নাওগাঁও ইউনিয়নের হরিমরাম বাড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে তিনটি ভেকু মাটি কেটে ১০-১২টি ট্রাকে করে মুক্তাগাছার মাস্টার ইটভাটায় মাটি নিয়ে যাচ্ছে।
পাশেই ৬ চাকার দুটি ড্রাম ট্রাক ফসলি জমিতে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই একটি ভেকু মাটি কেটে অন্য এক ট্রাক ভরছে।
ট্রাক ড্রাইভারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার কয়েকজন মাতবর ইট ভাটায় মাটি দেওয়ার চুক্তি করেছে। ফসলি জমির মালিক কৃষককে জমিতে সার কিনে দেওয়ার কথা বলে মাটি কেটে নিচ্ছে।
জানা গেছে, এসব ফসলি জমির মাটি এক মাস ধরে ধলাপাড়া, ঘাটাইল, মধুপুর ও মুক্তাগাছার ইটভাটায় যাচ্ছে রাতদিন।
এ মাটি ইটভাটায় নেওয়ার ফলে আবাদি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি ৬ চাকার ড্রাম ট্রাকসহ ১০/১২টি ট্রাক রাতদিন মাটি পরিবহন করার ফলে গ্রামীণ পাকা সড়ক নষ্ট হচ্ছে। গ্রামীণ সড়কে ভারী যান চলাচল করার উপর বিধি-নিষেধ থাকলেও ৬ চাকার ড্রাম ট্রাকে মাটি পরিবহনে সড়ক ভেঙ্গে যাচ্ছে।
ছয় চাকার ড্রাম ট্রাক গ্রামীণ সড়কে চালানো যায় কি-না জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চালক বলেন, ‘একবার পুলিশ এসেছিল। পরে তাদের টাকা দিয়ে মাতবররা ম্যানেজ করেছে। এখন আর আসে না। আমরা অবাধে কাজ করতে পারি’।
স্থানীয়রা বলেন, ‘এভাবে ভারী যান চলাচলের ফলে পাকা সড়ক ভাঙছে। বর্ষাকালে আরও ভাঙ্গবে। তখন মানুষ মজা বুঝবে।’
টেকিরবাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক মাস ধরে রাত-দিন ট্রাকে করে মাটি নেওয়া হচ্ছে। ধুলায় দোকানপাট খোলা যায় না। বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ এসেছিল কিন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
বিষয়টি নিয়ে ফুলবাড়ীয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোল্লা জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইলে কল করা হয়। তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল ছিদ্দিক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ফসলি জমির মাটি কেটে ইট ভাটায় নেওয়া বড় অপরাধ। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
একে/এএন