১৯৬তম ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে শোলাকিয়া

ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে কিশোরগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এই ঈদগাহ ময়দানটি প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো। এখানে প্রতিবছর দেশ-বিদেশের তিন লাখেরও বেশি মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন।
সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ নামাজের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ১৯৬তম ঈদ জামাতের জন্য পরিষ্কার করা হচ্ছে মাঠ। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সৌন্দর্য বর্ধনে মাঠের চারপাশের প্রাচীর ও মসজিদের দেয়াল রং করা হচ্ছে। ঈদগাহ মাঠের ছোট ছোট গর্তে বালু ফেলে মাঠ সমান করা হচ্ছে। মাঠ পরিষ্কার করার জন্য সকাল থেকে কোদাল, কাছার নিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মাঠ পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ঈদগাহ ময়দানে নির্মাণ করা হচ্ছে ৬টি ওয়াচ টাওয়ার।
কথা হয় করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের হাজী আব্দুর রশিদ ভূইয়ার ছেলে আব্দুল হালিম ভূইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার জন্ম ১৯৩৮ সালে, ছোটবেলায় এই শোলাকিয়া মাঠে নামাজ পড়তে আসতাম। ১৯৭৩ পরবর্তী সময়ে অনেকবারই শোলাকিয়ায় নামাজ পড়তে এসেছি। এখন অনেক বয়স হয়েছে, তাই বাড়ির কাছে ঈদগাহ মাঠেই নামাজ আদায় করি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে শোলাকিয়ায় নামাজ পড়তে। ঐতিহ্যের দিক দিয়ে শোলাকিয়ার সুনাম অক্ষুণ্ন থাকবে।
শোলাকিয়া ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা তাকরিম হোসাইন জিহাদ জানান, এবার ১৯৬তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সব কাজ হচ্ছে। প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষের পথে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী জানান, নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় রেখে ছাতা, মোবাইল ও কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে ঈদগাহ মাঠে প্রবেশ করা যাবে না। এ ছাড়া পুরো ঈদগাহ ময়দান সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রিত হবে। নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য সার্বক্ষণিক ৪টি ড্রোন ক্যামেরা থাকবে। ঈদগাহ ময়দানের ২৮টি প্রবেশ পথে হ্যান্ডমেটাল ডিটেকটর নিয়ে অবস্থান করবেন নিরাপত্তাকর্মীরা। ঈদগাহে আগত মুসল্লিদের কেবল জায়নামাজ ছাড়া কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর সাহেব বাড়ির পূর্ব পুরুষ শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ৭ একর জমির উপর এ ঈদগাহ ময়দান প্রতিষ্ঠা করেন। এমনকি তার ইমামতিতে এখানে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জনশ্রুতি আছে, বহু বছর আগে এ মাঠে অনুষ্ঠিত এক ঈদের জামাতে কাতার গুণে ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লির উপস্থিতি মেলে। তখন থেকে লোকজন এ ময়দানকে 'সোয়া লাখিয়া' ঈদগাহ হিসেবে ডাকতে শুরু করেন। পরে উচ্চারণ বিবর্তনে এর নাম শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসেবেই পরিচিত হয়ে উঠে।
এসজি
