যমুনা বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান, আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা
শুকনো মৌসুমে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনার নদীতে জেগে ওঠে অসংখ্য ফসলি জমি। সেইসব জমির মালিকদের ভয়ভীতি ও জিম্মি করে দিন-রাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে উঠে অসাধু বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এবং জনপ্রতিনিধি। তবে স্থানীয় প্রশাসন নিরব ভূমিকায় থাকে বলে মাঝে মধ্যেই অভিযোগ করে থাকেন ক্ষতিগ্রস্থ ফসলি জমির মালিকরা ও ভাঙনের শিকার অসহায় পরিবারগুলো। তবে প্রশাসনের বালু উত্তোলন বন্ধে জোড়ালো ভূমিকায় আপাতত বন্ধ বালুঘাটগুলো।
উপজেলার যমুনা নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষাকালে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রতিবছর বিলীন হয়ে যায় শতশত বসতভিটা, ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির, আঞ্চলিক সড়ক ও স্কুলসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের আশঙ্কায় থাকে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যমুনা ফার্টিলাজার কারখানার সার পরিবহনের জন্য ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক গাইড বাঁধ।
এছাড়া বর্ষা মৌসুমে সে সময় ভাঙনরোধে টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তীব্র ভাঙন ও নদী পাড়ের ক্ষয়কে বালু উত্তোলনের একমাত্র কারণ বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়ে বঙ্গবন্ধু সেতু, নির্মাণাধীন রেল সেতু, গোবিন্দাসী কাকুদাইর পর্যন্ত সেতু রক্ষা গাইড বাঁধ ও বঙ্গবন্ধু সেনানিবাসের গাইড বাঁধ।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব গোল চত্বর থেকে জিগাতলা খোকার বালুর ঘাটসহ কমপক্ষে ১০-১২ টি বালু ঘাট রয়েছে ও ভূঞাপুর-তারাকান্দি মহাসড়কের জগৎপুরা থেকে ননিল বাজার পর্যন্ত কমপক্ষে ৮-১০ টি ঘাট রয়েছে। প্রশাসনের তৎপরতা ও কঠোর সাড়াশি অভিযানের ফলে আপাত এই সব অবৈধ ঘাট বন্ধ। ঘাট চালু থাকা সময়ে ট্রাক প্রতি চাঁদা নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা। বন্ধ হয়নি বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব সড়কে চাঁদা তোলা, শ্রমিক কল্যাণের নামেও এসব চাঁদা তোলা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন কুঠিবয়ড়া থেকে নলীন বাজার পর্যন্ত কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয়ে গাইড বাঁধ নির্মাণ করে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু সেই গাইড বাঁধের কাছ থেকে ভেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে বালু কাটা হয়। জগৎপুরা এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে ৫টি বালুর ঘাট তৈরি করে ট্রাকযোগে বালুমাটি বিক্রি করা হয়েছে। ফলে বন্যার সময় নির্মিত বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে অর্জুনা এলাকায় কতিপয় লোক যত্রতত্র বালুর ঘাট তৈরি করেছে। বালু ব্যবসায়ীরা ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের প্যালাসাইটিং ভেঙে রাস্তা তৈরি করে হাজার হাজার ট্রাকে বালু বিক্রি করেছে। কিছু বলতে গেলে মারধর করতে আসে। দেড়-দুই মাস ধরে জেগে উঠা চর কেটে বিক্রি করেছে তারা। বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করলেই প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এদিকে, ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসের গেল শনিবার (৮ এপ্রিল) দিনব্যাপি উপজেলার অর্জুনা, নিকরাইল ও গোবিন্দাসীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অবৈধ বালুঘাট বন্ধে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা প্রশাসন। এই অভিযান চলমান রয়েছে। অভিযানে বাংলা ড্রেজার দিয়ে ফসলি জমি কেটে বিক্রি করায় অবৈধ ঘাটগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন প্রশাসন। তবে, কয়েকদিন পর পুনরায় ঘাটগুলে চালু করার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন, যমুনা নদীর ভূঞাপুর উপজেলার অংশে ভাঙন ও ফসলি জমি রক্ষায় জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার স্যারের নির্দেশনায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের সাড়াশি অভিযান চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে ৩০টি অভিযানে ১১ লাখ টাকা জরিমানা আদায়, প্রায় ৭ হাজার মিটার পাইপ ধ্বংস ও ২০ টির অধিক বাংলা ড্রেজার ব্যবহারের অনুপযোগেী করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাথে নিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এএজেড