দালালদের কব্জায় কিশোরগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস
কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অসাধু কর্মচারী ও দালালদের কারণে সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিশোরগঞ্জের সব উপজেলার মানুষ পাসপোর্ট করতে এখানে আসেন। এর মধ্যে ভৈরব, কুলিয়ারচর, ইটনা, মিঠামইন, অস্টগ্রাম, বাজিতপুর, তাড়াইল-এই উপজেলাগুলোর দূরত্ব প্রায় ২৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার। জানা গেছে,পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২৫০ বা তারও বেশি আবেদন জমা হয়। পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের অভিযোগ দালাল ছাড়া আবেদন জমা দিলে বিভিন্ন রকমের হয়রানির শিকার হতে হয়।
পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়,পাসপোর্টের জন্য গ্রাহকদের লম্বা লাইন।পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়।অফিসের প্রতিটি কক্ষে সকাল থেকে বায়োমেট্রিক দিতে সাধারণ মানুষের ভিড় থাকে কিন্তু সেখানে বসার কোনো সুযোগ নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর অনেক সেবা গ্রহীতাদের ফিরতে হচ্ছে সেবা না পেয়েই। আবার অনেককেই অফিসের সামনে বসে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে সেবা গ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দালাল ও অসাধু কর্মচারীদের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষ। বাড়তি টাকা ছাড়া মিলে না পাসপোর্ট। দালাল চক্রের অর্থ বাণিজ্য ও অন্যদিকে পাসপোর্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীর অনিয়মের কারণে জিম্মি হয়ে পড়েছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা।
পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, দালালদের মাধ্যমে আবেদন ফরম জমা দিলে সেই ফরম সহজে জমা হয়। দালালরা দ্বিগুণ টাকার বিনিময়ে সহজেই পাসপোর্ট করে দিতে পারে বলে জানায় কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের আশ্রয় না নিলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা হয়রানি করেন। তারা পাসপোর্ট ফরমে বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করেন। এ ছাড়াও সেখানে কর্মরত কিছু আনসার ও পুলিশ সদস্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাড়তি টাকার ভাগ পান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল জানান,প্রতিটি আবেদনের জন্য পাসপোর্ট অফিসের প্রধান কর্মকর্তা ১১০০ টাকা নেয়।পাসপোর্ট অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরাও টাকা দিলে দ্রুত কাজ করে দেয়। আর যারা নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে পাসপোর্ট করে তাদের পাসপোর্ট পেতে সময় একটু বেশি লাগে। পাসপোর্ট অফিসের দূর্নীতি সম্পর্কে সবাই জানে এবং এখানে ঘুষ বাণিজ্য ওপেন সিক্রেট। এ ছাড়াও পাসপোর্ট অফিসে নামধারী ভুয়া সাংবাদিকেরও অভাব নেই। দোকানগুলোতে সকালে আসে সাত/আটটা ফাইল হাতে নিয়ে কর্মকর্তার রুমে গিয়ে সই করিয়ে আনে।
ভৈরব থেকে আসা পাসপোর্ট প্রত্যাশী ফয়েজ আহম্মেদ জানান,ভৈরব থেকে সপ্তাহে তিন দিন পাসপোর্ট অফিসে আসতে হয়েছে। দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্টের আবেদন জমা না দিলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। ৫০কিলোমিটার দূর থেকে এসে অনেকদিন ঘুরার থেকে দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করা ভালো নয় কি?
তিনি বলেন,পাসপোর্টের জন্য দালালকে ৩ হাজার টাকা দিয়েছি তবুও এক মাস ধরে পাসপোর্টের জন্য ঘুরতেছি। আমাদের কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কিন্তু দালালদের সখ্যতা এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে। তাদের মাধ্যমে কাজ করালে কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে হয়।
পাসপোর্ট প্রত্যাশী আমিন বলেন,রমজানের দিন পাসপোর্টের জন্য এসেও ঘুরে যাওয়া লাগতেছে। যাদের দালাল আছে তাদের লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হয় না। আমি সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই সকল ভোগান্তি প্রথম থেকেই। আবেদন জমার পরে যতগুলো স্টেজ আছে সবখানেই ভোগান্তি।বলতে গেলে দালালদের কব্জায় পাসপোর্ট অফিস,ভোগান্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আইরিন পারভীন ডালিয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন,আপনার কোনো আবেদন থাকলে জমা দেন বা পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কাজ থাকলে করে দিব। আপনার কাছে পাসপোর্টের বিষয়ে যদি কোনো অভিযোগ থাকে আমাকে প্রমাণ দেখান।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার মতো করে দেখতেছি দালালদের ব্যাপারটা। আমি নতুন এসেছি,ইতিমধ্যে দালালদের বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে অবগত করেছি।
এসআইএইচ