মাদারীপুরে তরমুজের দাম কমায় ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি
সরবারহ বেশি থাকায় মাদারীপুরের বাজারগুলোতে তরমুজের দাম কমতে শুরু করেছে। আগে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হলেও বতর্মানে তার মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। এতে তরমুজ ক্রেতাদের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়েছেন বলে জানান ক্রেতারা।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকালে মাদারীপুরের পুরানবাজার, চরমুগুরিয়া বাজার ও লেকেড়পার বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তরমুজ আসে মাদারীপুরের মস্তফাপুর ফলের আড়তে। সেই তরমুজগুলোকে আড়তদারা ছোট, বড়, মাঝারি সাইজে ভাগ করে সারিবদ্ধভাবে মজুদ করে। আর এগুলো ক্রয় করতে আসেন খুচরা বিক্রেতারা। কেউ ট্রলি বা অটোরিকশা বা ভ্যানে করে ভরে নিয়ে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন হাট-বাজারে। আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি তরমুজ এসেছে আড়তগুলোতে। ফলে কেনা-বেচাও বেড়েছে আড়তগুলোতে। রোজার শুরুতে প্রতিটি আড়তেও তরমুজ কেজি ধরে বিক্রি হতো। এর ফলে ভোক্তা অধিদপ্তর বাজার মনিটরিং করায় বর্তমানে আড়ত থেকে পিস হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারেও পিস বিক্রি করছে কেউ কেউ। তবে সাইজ অনুযায়ী তরমুজের বিভিন্ন দামও রয়েছে।
মাদারীপুর জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, জেলার বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে কৃষকদের ক্ষেতে এখন তরমুজের সমারোহ। কাটা ও বিক্রিতে ব্যস্ত কৃষকরা। তবে তরমুজ চাষের বড় এলাকা হচ্ছে শিবচর, কালকিনি ও রাজৈর উপজেলায়। এখানকার তরমুজ সুস্বাদু ও মিষ্টি বলে জেলার বিভিন্ন বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অনেকেই আগাম তরমুজ চাষ করেছেন ভালো দাম পাওয়ার আশায়। বিগত বছরের চেয়ে এবার তরমুজ চাষে খরচ পড়েছে বেশি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে তাদের খরচও বেশি হয়েছে।
বরিশালের ঝালকাঠি থেকে মস্তফাপুর আড়তে তরমুজ নিয়ে আসা নাজমুল মৃধা নামের এক কৃষক বলেন,বড় ধরনের বৃষ্টি বা শিলা বৃষ্টি হলে বড় ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে। তাই তারা আগেভাগেই তরমুজ কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে ক্রেতাদের এতে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।
তরমুজ বিক্রেতা ওহিদ হাওলাদার বলেন, আগে আমরা অনেক টাকায় তরমুজ কিনে আনতাম। তাই বেশি টাকায় বিক্রি করতাম। এখন তরমুজ বেশি আসায় তরমুজের দাম কমেছে। তাই আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারতেছি।
মাদারীপুর পৌর শহরের লেকপাড়ের খুচরা বিক্রেতা শাহীন বলেন, ‘আমরা আগে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা দরে কিনে আনছি আড়ত থেকে। বিক্রি করেছি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় প্রতি কেজি। এখন আড়তেও দাম কমেছে। তাই আমরাও দাম কম রাখি।
চরমুগুরিয়া বাজারের তরমুজ ক্রেতা তানিয়া আক্তার বলেন, ‘রোজার শুরুতে তরমুজের দাম বেশি ছিল। তখন তেমন তরমুজ কিনে খেতে পারি নাই। এখন দাম কমায় প্রতিদিন তরমুজ কিনে খেতে পারছি।
রিকশাচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন তমুজের দাম বেশি থাকায় কোনো তরমুজ কিনতে পারি নাই। আজ তরমুজের দাম কমায় তরমুজ কিনে খাইতে পারছি আল্লাহর রহমতে। আমার কাছে ভালো লাগতাছে এখন আমি প্রতিদিন তরমুজ খাইতে পারব।’
এ ব্যাপারে মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সন্তোষ চন্দ্র চন্দ জানান, ‘এই বছর মাদারীপুরে তরমুজের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে তার চেয়ে বেশি তরমুজের আবাদ হয়েছে । ফলে অন্য বছরের তুলনায় এবার জেলায় তরমুজও উৎপাদন বেশি হয়েছে। আগামীতে যাতে কৃষকরা বেশি বেশি তরমুজের আবাদ করতে পারে। এ জন্য তাদেরকে সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে।
এসআইএইচ