সাভারে দুই নেতার বিরুদ্ধে মার্কেট দখল চেষ্টার অভিযোগ
সাভারে দাবি করা চাঁদা না দেওয়ায় জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার মার্কেট দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও জাতীয় পার্টির দুই নেতার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযুক্ত দুই নেতাসহ তাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থা কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্তরা হলেন-সাভার পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার হেফজু মিয়ার ছেলে বর্তমানে সাভার পৌরসভার মজিদপুর এলাকার বাসিন্দা ও একাধিক মামলার আসামি পাভেল আহমেদ (৩৫), সাভার পৌরসভার ব্যাংক কলোনী এলাকার আবেদ আলীর ছেলে ও জাতীয় পার্টির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাদুর ইমতিয়াজ(৪৮), সাভার পৌর এলাকার মজিদপুরের সাদেক আলী ফরাজির ছেলে আব্দুল সালাম ফরাজী (৪৫), একই এলাকার আফসার উদ্দিনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩৮) ও আমিন মিয়ার ছেলে বেলাল উদ্দিন মনা (৪০), শাহীবাগ এলাকার রুহুল আমিন মিস্ত্রির ছেলে মোহাম্মদ রিপন (৩৭)। এ ছাড়াও শীর্ষ সন্ত্রাসী পাভেল আহমেদ ওরফে তোতলা পাভেলের ভাই ইউসুফসহ আরো ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পাভেল ও ইমতিয়াজ বাহিনীর একটি চাঁদাবাজ চক্র জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার জমিদারি ভাড়া উত্তোলন করার টাকা থেকে দৈনিক, মাসিক ও এককালীন মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছে। অন্যথায় মার্কেটের ভাড়া উত্তোলন করতে দিবে না, প্রয়োজনে তাদের বাধা উপেক্ষাকারী সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রাণনাশ করা হবে।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাভার উপজেলায় মানববন্ধনসহ মার্কেটের মসজিদের মাইকে মাইকিং করে জমিদারি ভাড়া দেওয়া থেকে বিরত থাকতে দোকান মালিকদের নির্দেশ দেয় অভিযুক্ত দুই নেতার নেতৃত্বে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ভুয়া কমিটি। সেইসঙ্গে অভিযুক্তরা সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন এবং মার্কেটের সৌচাগার দখল করাসহ মার্কেটের সামনের অংশে নির্মাণাধীন রিজাব ট্যাংকের উপর দোকান বসিয়ে দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ ছাড়াও পাভেল বাহিনীর অফিসে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে দাবি করা চাঁদা আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংস্থার কর্মচারী দেলোয়ার হোসেন দুলাল ও মোহাম্মদ কামালকে জমিদারি ভাড়া উত্তোলন বন্ধ করতে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। পরে পুলিশের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে সংস্থার লোকজন।
অভিযোগের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে জায়গা অনুযায়ী জনপ্রতি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে এককালীন নিয়ে অর্ধশতাধিক হকারকে মার্কেটের সামনে বসিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আদায় করে দৈনিক ও মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছেন তারা (অভিযুক্তরা)।
এ বিষয়ে জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার চেয়ারম্যান মো: নুরুল আলম সিদ্দিক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, হত্যা চেষ্টার ও চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে এসে পুনরায় আরও এক কোটি টাকা দাবি করে পাভেল বাহিনী। দাবি করা চাঁদার টাকা না দেওয়ায় মার্কেটের একটি দোকান দখল করে অফিস বানিয়ে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার সম্পূর্ণ মার্কেট দখলের পায়তারা করছে তারা।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন পূর্বেও দখল চেস্টায় গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার নির্বাচন ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একাধিক রিট পিটিশন দায়ের করে ব্যর্থ চেষ্টা চালায় পাভেল আহমেদ ও বাহাদুর ইমতিয়াজ বাহিনীর সদস্যরা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার মহাসচিব মো. আইয়ুব আলী হাওলাদার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে জয়লাভের পর দখলের আশঙ্কা ও প্রতিকার চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক, ঢাকা জেলা প্রশাসক, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪), সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানায় আমরা অভিযোগ দায়ের করেছি।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দখল চেষ্টার ব্যাপারে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা পিপিএম বলেন, যত বড় ক্ষমতার অধিকারী হোক না কেন জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থা মার্কেট দখল করার কোনো সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মার্কেটের দোকানে দাবি করা চাঁদা না দেওয়ায় এবং দোকানিকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় এই বছরের ২৪ জানুয়ারি শীর্ষ সন্ত্রাসী পাভেল আহমেদ ওরফে তোতলা পাভেলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় সাভার মডেল থানা পুলিশ। জামিনে মুক্ত হয়ে ফের মার্কেট দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে সন্ত্রাসী পাভেল বাহিনী।
এসআইএইচ