রাজশাহীতে কাউন্টারে নেই টিকিট, আছে স্টেশনে
রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ‘পদ্মা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের টিকিট নিতে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ইয়ামিন হোসেন সিয়াম। হাতের মোবাইল দিয়ে অনলাইনেও ঢুকে আছেন। সকাল ৯টায় অনলাইনে টিকিট ছাড়া হলো। সঙ্গে সঙ্গে গতি কমল সার্ভারের। এক মিনিট পর ইয়ামিন দেখলেন, অনলাইনে আর কোনো টিকিট নেই। আগামী ২২ জানুয়ারির টিকিট কাটতে গিয়ে মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) এভাবেই এক মিনিটে অনলাইনের টিকিট শেষ হতে দেখেছেন ইয়ামিন।
অনলাইনের টিকিট শেষ বলে ইয়ামিন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে কাউন্টারের সামনেও দাঁড়িয়ে ছিলেন। ২০-২৫ জনের পর তিনি যখন কাউন্টারে পৌঁছালেন তখন টিকিট শেষ। কাউন্টার থেকে বলা হলো-‘টিকিট আর নেই।’
এভাবেই চোখের পলকে শেষ হচ্ছে ট্রেনের টিকিট। তবে বেশি টাকা দিলে কিছুক্ষণ পরই কাউন্টারের সামনে টিকিট মিলছে কালোবাজারে।
ইয়ামিন বলেন, ‘এক মিনিটেই কীভাবে টিকেট শেষ হলে গেল! রাজশাহী থেকে চারটি ট্রেনের কোনোটিতেই শোভন টিকিট নেই। বাধ্য হয়ে গেলাম এসি টিকিটের লাইনে। সেখানে ছিল মাত্র দুটি টিকিট। তাও পাইনি। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্রতিটি ট্রেনের টিকিটের এখন একই অবস্থা। বিশেষ করে ঢাকাগামী ট্রেনগুলোর টিকিট পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার!’
একদিকে করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আসন সংখ্যা অর্ধেক করা হয়েছে। আসনের সংখ্যা কম হওয়ায় অনেক মানুষ টিকিট পাচ্ছেন না। তারওপর কালোবাজারে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ট্রেনের টিকিট। আর কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে রেলকর্মীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার হচ্ছে প্রায়ই।
গত সোমবার (১৭ জানুয়ারি) লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট না পেয়ে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে বিক্ষোভ করেছেন একদল চাকরির পরীক্ষার্থী। আগামী ২১ জানুয়ারি ঢাকায় চাকরির পরীক্ষা দিতে যেতে টিকিটের জন্য তারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। সকালে টিকিট বিক্রি শুরুর কিছুক্ষণ পরই শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা বুকিং সহকারীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি সমাধানের জন্য তাদের পরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টিকিট প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেন পশ্চিম রেলের ডেপুটি চিফ কর্মাশিয়াল ম্যানেজার।
তখন কয়েকজন টিকিট প্রত্যাশী জানান, কাউন্টার থেকে বলা হয়েছিল মোট ১০টি টিকিট আছে। বুকিং সহকারী সাতটি টিকিট বিক্রির হিসাব দিতে পেরেছেন। তাহলে বাকি তিনটি টিকিট কোথায় গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন টিকিট প্রত্যাশীরা। রেল কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত এ চাকরি প্রত্যাশীদের টিকিট দিতে পারেননি। এ নিয়ে টিকিট প্রত্যাশীরা একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনলাইনে টিকিট বিক্রির সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন কালোবাজারিরা। একটি চক্র সফটওয়্যারের মাধ্যমে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে অনলাইন থেকে টিকিট তুলে নিচ্ছে। রেলওয়ের সার্ভারে নাম ও জাতীয়পরিচয়পত্র যাচাই করার সুযোগ না থাকায় চক্রটি সব টিকিট কিনে ফেলছে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা টিকিট পাচ্ছেন না। কালোবাজারিদের এ টিকিই বিক্রি হচ্ছে স্টেশন চত্বরে চড়া দামে।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সরেজমিনে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গেলে বাপ্পি নামে এক ব্যক্তির কাছে টিকিট পাওয়া যায়। তিনি জানান, তার কাছে ৩০টি টিকেট আছে। প্রতিটি টিকিটের দাম পড়বে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি টিকিটের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। বাপ্পির মতো অনেকের কাছেই কালোবাজারে টিকিট পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে পশ্চিম রেলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ ভুঁঞা বলেন, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী চারটি ট্রেনের গড়ে আসন ৯০০। কিন্তু করোনার জন্য আমরা ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করি। অর্থাৎ ৪৫০টি আসন আমরা বিক্রি করতে পারি। এর অর্ধেক অনলাইনে বিক্রি হয়। অনলাইনে প্রতিটি ট্রেনের জন্য গড়ে ২২৫টি টিকেট বিক্রি করে থাকি।
এক মিনিটেই টিকেট শেষ হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো কোনো ট্রেনে মাত্র ২২৫টি টিকিট। সবাই কিনতে চায়। এটা তো হট কেকের মতো। টিকিট ছাড়ার সময় সবাই কেনার চেষ্টা করেন বলে দ্রুত শেষ হয়ে যায়। কাউন্টারেও তো পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। অনেকগুলো কাউন্টার। এক কাউন্টারে টিকিট পেলেও লাইনে দাঁড়িয়ে অন্যটিতে পাওয়া যায় না।
তবে কালোবাজারির বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানিয়েছেন পশ্চিম রেলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ ভুঁঞা।
এসএসকে/এসএন