মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েও ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় রহমান

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুস সালামের ছেলে আব্দুর রহমান এবার ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তার পরিবারে। দেখা দিয়েছে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা।
যতসামান্য কৃষি জমি থেকে স্বল্প আয় দিয়ে ছয় সদস্যের পরিবারের সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে আব্দুর রহমানের পড়া-লেখার খরচ চালিয়ে আসছেন কৃষক আব্দুস সালাম। আব্দুস সালাম ও সামেছা বেগম দম্পতির পরিবারে তিন সন্তানের মধ্যে আব্দুর রহমান দ্বিতীয় সন্তান। আব্দুর রহমান সাপাহার উপজেলার আল হেলাল ইসলামী একাডেমি অ্যান্ড কলেজ থেকে জেএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি-তে গোল্ডেল এ-প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর রাজশাহী নিউ গর্ভমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতেও গোল্ডেন এ-প্লাস অর্জন করেন। এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত তিনি।
আব্দুর রহমান বলেন, আমার বাবার তেমন কোনো সম্পদ নেই। দাদার কাছে থেকে দেড় বিঘা মতো জমি পেয়েছেন বাবা। সেই জমিতে চাষাবাদ করে কোনো রকমে সংসার এবং আমার লেখা-পড়া খরচ চালিয়েছেন। আমাকে নিয়ে বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল, পড়া-লেখা করে একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে হবে। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগের মধ্যদিয়ে বাবা মায়ের সেই স্বপ্নের দুয়ার খুললেও অর্থ সংকটের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছে আমার পরিবারকে। চলতি মাসের ২৭ তারিখ ভর্তির সময় দিয়েছে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। জানি না কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিবে আমার পরিবার।
আব্দুস সালাম বলেন, আল্লাহ্'র কাছে শোকরিয়া আদায় করছি। তিনি আমার ছেলেকে ডাক্তার হওয়ার একটি সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি গরিব মানুষ, যতসামান্য জমিতে চাষাবাদ ও কৃষি কাজ করে সংসার এবং ছেলের পড়া-লেখা খরচ চালিয়ে আসছি। এখন ছেলেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে হবে। ভর্তির জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা করা আমার জন্য খুবই কঠিন হবে। তাই আল্লাহ্'র উপর ভরসা করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।
সাপাহার আল হেলাল ইসলামী একাডেমি অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর আলম বলেন, আব্দুর রহমান একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। সে এই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে আব্দুর রহমান মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তার এই কৃতিত্বে আমরা গর্বিত। আব্দুর রহমান একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে দেশ ও জাতীর কল্যাণে অবদান রাখবে বলে আশা করছি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মেডিকেলে ভর্তির বিষয়ে আব্দুর রহমানের পরিবার যদি সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করে, তা যাচাই করে সরকারি সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
এসএন
