উদ্বোধনের অপেক্ষায় খুলনা-মোংলা রেললাইন
খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন প্রকল্পটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় খুলনাবাসী। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে রেল প্রকল্পের ৯৬ শতাংশ কাজ। আর চলতি বছরের জুনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এটি চালু হলে মোংলা বন্দরে অর্থনৈতিভাবে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক অমরোতোশ কুমার ঝা বলেন, এ প্রকল্পের রেললাইন, টেলি কমিউনিকেশন, সিগনালিং ও রুপসা নদীতে সেতু নির্মাণসহ প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অবকাঠামোর সব কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ছিল। রূপসা নদীতে স্প্যান স্থাপন ছিল বেশ চ্যালেঞ্জ। সেসব মোকাবিলা করেই সম্পন্ন হয়েছে এ প্রকল্পের কাজ। বাংলাদেশ রেলওয়ে এর রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এর আয়ুষ্কাল ১০০ বছরেরও বেশি হবে।
মোংলা বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্য ও পর্যটন পরিবহনে মোংলা বন্দরকে আনা হচ্ছে রেল সেবার আওতায়। এ লক্ষ্যেই নির্মাণ করা হচ্ছে খুলনা-মোংলা পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ।
রেলসেবা চালু হলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে, বাড়বে পর্যটকের সংখ্যা। রেলপথ না থাকার কারণে এতদিন মোংলা বন্দরের বড় বড় কন্টেইনার পরিবহনের সমস্যা হতো। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে পর্যটক পরিবহনেও সহজ হবে। দীর্ঘ ৭৩ বছর পর মোংলা সমুদ্রবন্দরে রেলপথ যুক্ত হচ্ছে। এনিয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা।
বন্দর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সানজিদা আক্তার বলেন, মোংলা থেকে ট্রেনে উঠে খুলনা কিংবা ঢাকা যাব এটা সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না, কারণ এটা আমাদের স্বপ্ন ছিল। এখন শুধু স্বপ্নটা পূরণের অপেক্ষার প্রহর গুণছি। খবরটা শুনে আমরা খুবই আনন্দিত।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী এইচ এম দুলাল, মশিউর রহমান ও ইকবাল হোসেন বলেন, মোংলা দেশের অন্যতম সমুদ্র বন্দর হলেও এখানে কোনো রেল সংযোগ ছিল না। ফলে বন্দরটিতে অন্যান্য দেশের বড় মালবাহী জাহাজ ভিড়তে আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। বরং সব বড় বড় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গর করে। তাতে মোংলা বন্দর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যদিও মোংলা বন্দরকে রেল সেবার আওতায় আনতে এর আগে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
প্রকল্প সূত্র জানায়, খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বিগত ২০১০ সালে অনুমোদন করে। প্রকল্পটি তিনটি ভাগে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তার মধ্যে প্যাকেজ-১ রেললাইন নির্মাণ, প্যাকেজ-২ রূপসা নদীর উপর রেলসেতু ও প্যাকেজ-৩ টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং সিস্টেম। এসব প্রকল্পের আওতায় মূল লাইনসহ রেলওয়ে ট্রাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। আর রুপসা নদীর উপর নির্মাণ করা হচ্ছে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রুপসা রেলসেতু। ইতোমধ্যে ওই সেতুর কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে। তা ছাড়া ৩১টি ছোট সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর ১০৭টি কালভার্টের মধ্যে ১০৫টির কাজও শেষ হয়েছে। ৯টি ভিইউপির নির্মাণ কাজ এবং ২৯ এলসি গেটের ২৬টি কাজ শেষ হয়েছে।
এ ছাড়া ৭টি স্টেশন বিল্ডিংয়ের মধ্যে ফুলতলা, আড়ংঘাটা ও মোহাম্মদ নগরের কাজও শেষ হয়েছে। বাকি ৫টি স্টেশনের মধ্যে কাটাখালি ৮০ শতাংশ, চুলকাঠি ৭ শতাংশ, ভাগা ৭২ শতাংশ, দিগরাজ ৯৮ শতাংশ ও মোংলা স্টেশন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রেলপথটি চালু হলে মোংলা বন্দরসহ পুরো এলাকায় অনেক পরিবর্তন আসবে বলে জানা গেছে।
নির্মাণাধীন রেললাইন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আরিফুজ্জান বলেন, খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে পুরো রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। দুদফায় ডিপিপি সংশোধনের পর প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। তার মধ্যে ভারতীয় ঋণ রয়েছে ২ হাজার ৯৪৮ কোটি ১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। বাকি ১ হাজার ৩১২ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সরকারি ফান্ড থেকে ব্যয় হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী জানান, মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ছিল না। এখন খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু হলে সড়ক পথে পণ্য পরিবহন চাপ কমে যাবে। এ ছাড়া পণ্য পরিবহন ব্যয় ও সময়ও অনেক হ্রাস পাবে। পাশাপাশি মোংলা বন্দরের নৌ, সড়ক ও রেলপথের মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে প্রতিবেশি দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের পণ্য পরিবহন অনেকটা সহজ হবে।
এসএন