চুরির অভিযোগে যুবককে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন
গাজীপুরের শ্রীপুরে চুরির অভিযোগে এক যুবককে গাছের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের মার্কেট সংলগ্ন খান বাড়ীর সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার যুবক আরিফুল খান (২৮) দমদমা গ্রামের উসমান খানের ছেলে। তাকে স্বজনেরা গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পর ওইদিন রাত ১০ টার পর বাড়ীতে নিয়ে আসে। অভিযুক্তরা হলো একই গ্রামের আফসার উদ্দিন বাগমারের ছেলে মেহেদি বাগমার, সোলাইমান খানের ছেলে রাসেল খান, বরকত খানের ছেলে জিয়াউর রহমান, সিরাজ উদ্দিন খানের ছেলে ইজ্জত আলী খানসহ তাদের ৮/১০ জন সহযোগী।
নির্যাতনের শিকার আরিফুল খানের ভাই আশরাফুল আলম খান জানান, ঢাকার এক বাসিন্দা (ডাঃ কাইয়ুম) গত প্রায় ৩/৪ বছর আগে দমদমা এলাকায় জমি কিনে। বর্তমানে ওই জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মানের কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ওই ব্যাক্তি তার জমি দেখার জন্য আসলে ব্যবহৃত গাড়ী রেখে ভিতরে যায়। এসময় কে বা কারা ওই গাড়ীর গ্লাস ভেঙ্গে টাকা নিয়ে গেছে।
স্থানীয় আফসার উদ্দিন বাগমারের ছেলে কাউসার বাগমার, আজিজ খানের ছেলে ফজলুল হক খান, সিরাজ উদ্দিন খান (৭০), তার ছেলে ইজ্জত আলী খান এবং স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ফজলুল হক খানের নির্দেশে আরিফুলকে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে যায়।
পরে তার পায়ে দড়ি বেঁধে পা উপরের দিকে তুলে গাছের সাথে ঝুলিয়ে প্রায় এক ঘন্টা শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধর করে। তাদের নির্যাতনের কারণে তার ভাই জিহ্বা বের করে দিলে তারা মারধর বন্ধ করে দেয়। আমরা স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গন্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েছি। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবী করছি।
নির্যাতনের শিকার আরিফুল খান বলেন, আমি সকালে রুটি দিয়ে নাস্তা করে খেয়ে ঘরে শুয়ে আছিলাম। পরে প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য কাউসার আমাকে ফোন দিয়ে যেতে বলে। আমি না গেলে সে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে দুই পা বেঁধে গাছের সাথে ঝুলিয়ে শরীরের সব জায়গায় মারধোর করে। আমি ওই গাড়ীর গ্লাস ভাঙ্গি নাই।
প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর সদস্য জাকির হোসেন শেখ জানান, বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) পাশের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দেখতে গিয়েছিলাম। পরে দুপুরের দিকে আরিফকে গাছের সঙ্গে উপুর করে ঝুলিয়ে মারার খবর আমাকে ফোন করে জানায়। তখন স্থানীয় কয়েকজনের কাছে ফোন করলে তারা ছেড়ে দেয়।
পরে বিকেলে বাড়ীতে গিয়ে আরিফুল খানকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাই।
তিনি আরও বলেন, চুরি করে থাকলে আইনের হাতে তুলে দিবে। এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। তবে সে চুরির ঘটনার সাথে জড়িত কিনা এ বিষয়ে কেউ কোনো প্রমাণ দেয়নি বা যার টাকা চুরি হয়েছে তারও কোনো অভিযোগ নাই।
অভিযুক্ত প্রহলাদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য কাউসার মুঠোফোনে জানান, আরিফুল চুরি করেছে। তাই তাকে মারধর করা হয়েছে। তাছাড়া একটা চুরের বিষয়ে আপনি কেন আমাকে ফোন দিয়েছেন? আপনি আমাকে ফোন দিতে পারেন না। আপনি ঘটনাস্থলে আসেন। সে চুর এবং চুরি করেছে। তার বিরুদ্ধে আগেও চুরির অভিযোগ রয়েছে।
পর পরই অপর একটি বাংলালিংক নাম্বার থেকে ফোন করে কথা বলার সময় বেয়াদবি করে থাকলে এ প্রতিনিধির কাছে ক্ষমা চান এবং ওই গ্রামে যাওয়ার দাওয়াত দেন। যত ধরনের সহযোগীতা করতে হয় করবেন বলে জানান।
ওই জমি দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মিশু বলেন, টাকা চুরির পর মালিক কাউকে বিচার দেননি। কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি ওই যুবককে মারধর করেছে। আমাদের সাহেব মুব্বি মানুষ। এমন ঘটনার সঙ্গে থাকার প্রশ্নই আসে না।
প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, ওই যুবককে মারধরের একটি ভিডিও দেখেছি। আইনের উর্দ্ধে কেউই না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আজিজুর রহমান জানান, শুক্রবার (১৭ মার্চ) দুপুরে বিষয়টি আমরা শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনা জেনে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএজেড