হালকা বৃষ্টিতে পাকা সড়ক হয়ে উঠে মরণফাঁদ!
হালকা বৃষ্টিততে মরণফাঁদ হয়ে ওঠেছে মেহেরপুরের গাংনীর পাকা সড়ক। অবৈধ ইটভাটার মাটিতে উপজেলার কোন রাস্তায় নেই চলার মত। হালকা বৃষ্টিতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। আর এসব দেখেও নিরব কর্তৃপক্ষ। এদিকে ফসলি জমির টপ সয়েল (মাটির উপর অংশ) কেটে বিক্রির মহোৎসব চলছে। কৃষি কর্মকর্তাদের নিস্ক্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ইটভাটা ও মাটি ব্যবসায়ীরা এসব জমির টপ সয়েল কিনে নিচ্ছেন।
এ কারণে জমির উর্বরতা শক্তি হারানোর সাথে উৎপাদন ক্ষমতা ব্যহত হচ্ছে। যার কারণে জমি হারাচ্ছে শস্য উৎপাদন ক্ষমতা। অপরদিকে মাটি বোঝাই ট্রাক্টরের দৌরাত্বে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে এলাকবাসি। একদিকে ট্রাক্টরের ট্রলির মাটি রাস্তায় পড়ে ধুলাবালিতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে কাঁচা পাকা রাস্তা নষ্ট হচ্ছে।
এছাড়া ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে দূর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষের নিরব ভুমিকার কারণে ট্রাক্টর ট্রলি চালক ও ইটভাটা মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকাবাসি। প্রভাবশালীদের খুঁটির জোরে এসকল ট্রাক্টর চলছে বহাল তবিয়তে।
জনা গেছে, (১৬ মার্চ) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে কাঁদাপানিতে উপজেলার বিভিন্ন পাকা সড়কে জমে দুর্ভোগ বেড়েছে। ট্রাক্টর ট্রলি দিয়ে দুর দুরন্ত থেকে মাটি বহন করার ফলে ট্রলি থেকে মাটি পাকা সড়কে উপর পড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে চরম এতে বিপাকে পড়েছেন সড়কে চলাচল করা যানবাহন,পথচারী এবং বাইক চালকরা।
এছাড়া বিরামহীন চলাচলে শব্দ দুষণেও গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এসব অবৈধ যন্ত্রদানবের প্রতি নজর নেই কর্তৃপক্ষের। প্রশাসনের নীরব ভুমিকায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। গাংনী উপজেলা প্রায় প্রতিটা সড়ক ইটভাটার কাজে ব্যবহারের জন্য মাটি ট্রাকে করে নেওয়া হয়। মাটি নেওয়ার সময় ট্রাক থেকে উপচে সড়কের ওপর পড়ে এবং ট্রাকের চাকায় লেগে থাকা মাটি সড়কে লেপটে সড়কে মাটির আস্তরণ পড়ে থাকে একারনে সামান্য বৃষ্টি হলেই দূর্ঘটনা ঘটে।
মোটরসাইকেল চালক রবিউল ইসলাম বলেন, প্রায়ই ওই সড়ক দিয়ে যাওয়া আসা করি। কিন্তু এ সড়কের পাশে ইটভাটা থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই কাদামাটিতে সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত এবং প্রচলিত আইন মেনে ভাটা পরিচালনা করা উচিত। ভাটায় সরবরাহকৃত মাটি রাস্তায় পড়ে রাস্তার যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেছেন, চাষাবাদের জন্য আমদানিকৃত ট্রাক্টর এখন অর্ধশতাধিক ইটভাটায় ইট ও মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শহর থেকে গ্রামীণ জনপদে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ট্রাক্টর। এসকল ট্রাক্টরের বৈধ রুট পারমিট নেই। তাছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়ে দেখভাল না করার কারণে ১৫ থেকে ২০ বছরের শিশু-কিশোররাও এসব ট্রাক্টর অবাধে চালানোর সুযোগ পাচ্ছে। এ কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, ট্রাক্টর ট্রলিতে মাটি বহন করার কারনে একদিকে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। সরকারের কোটি কোটি টাকার রাস্তাঘাট ধ্বংস করছেন ট্রাক্টর ও ট্রলি। মাটি বহনের কারনে কোনটি কাঁচা আর কোন কার্পেটিং রাস্তা বোঝার কোন উপায় নেই।
পথচারীরা জানান, ট্রাক্টর চলাচলের সময় আশপাশ এলাকায় কুয়াশার মতো ট্রাক্টরের সৃষ্ট ধুলোয় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। আর ধুলোর মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করায় সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্ট রোগ আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার শিশুসহ সব বয়সের মানুষেরা। ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুস্থ ও রাখার সার্থে দ্রত সময়ের মধ্যে ট্রাক্টর বন্ধের দাবি করেন তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গাংনী-ধানখোলা, পূর্বমালসাদহ-হাড়িয়াদহ, পশ্চিমমালসাদহ-হিন্দা, পোড়াপাড়া-বাহাগুন্দা, পোড়াপাড়া-গাড়াডোব, মটমুড়া-মোহাম্মদপুর, ওলিনগর-বামন্দী, বামন্দী-কাজিপুর, তেরাইল-ওলিনগর, হেমায়েতপুর-আমতৈল, রামনগর-মটমুড়া, আকুবপুর চটকাতলাসহ বিভিন্ন সড়কের রয়েছে ইটভাটা। এসব ইটভাটার কারণে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে উঠেছে। জেলায় হাতে গোনা কয়েকটি বাদ দিয়ে সকল ইটভাটাই অবৈধ।
মেহেরপুর জেলা ট্রাফিক পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (টিআই) ফেরদৌস বলেন, ট্রাক্টর-ট্রলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি গাংনী ইটভাটা মালিক সমিটির সভাপতি এনামুল হক ও সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান আতু। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনী খাতুন বলেন, ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এএজেড