অবৈধ স্ট্যান্ডে টোকেন বাণিজ্য, কমছে না যানজট
যানজটের যন্ত্রণা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না কুমিল্লা নগরবাসীর। সময় যতো গড়াচ্ছে, যানজটের দুর্ভোগ ততোই বেড়ে চলেছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় হয় পথচারী ও যাত্রী সাধারণের। স্কুলগামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অফিসগামী কর্মকর্তা/কর্মচারী সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকেই পোহাতে হয় এই যানজটের নরক যন্ত্রণা।
ক্রমেই দুর্বিসহ হয়ে ওঠা কুমিল্লা নগরীর যানজট নিরসনে এবার মতবিনিময় সভায় বসেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, নগর কর্তৃপক্ষ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। সোমবার রাতের কুমিল্লা টাউন হল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই মতবিনিময় ওঠে আসে যানজট সৃষ্টির বেশ কয়েক কারণ।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলো নগরীর মোড়ে মোড়ে অবৈধভাবে স্ট্যান্ড বসিয়ে টোকেন বাণিজ্যের বিষয়টি। রিকশা, ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোর কারণেই মূলত যানজটের নরক যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
আর এসব স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাই। আর অবৈধ স্ট্যান্ড বসিয়ে টোকেন বাণিজ্যের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত। তিনি বলেন, আমার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে একটি ছিলো নগরীর যানজট নিরসন।
সে বিষয়ে বিশেষ সভায় আলোচনা হয়েছে- আমরা সকলের সহযোগিতায় যানজট নিরসন করতে পারবো। আর সিএনজি থেকে যারা টাকা তুলে তাদের একটি লম্বা লিস্ট আমার কাছে আছে, যাদের অনেকেই আমাদের ঘরানার। আমি এটা এসপি (পুলিশ সুপার) মহোদয়ের কাছে দিবো- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
নগরীর যানজট নিরসনে মেয়র আরফানুল হক রিফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম।
সভায় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এসময় তাদের মতামত শুনে যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন এমপি বাহার। তিনি জানান, ১৫ মার্চ (বুধবার) থেকে পুরো রমজান মাস কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় থেকে দেশওয়ালীপট্টি মোড় পর্যন্ত সকল প্রকার থ্রিহুইলার-রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা পরীক্ষামূলকভাবে বন্ধ থাকবে। শুধু ইঞ্জিনচালিত প্রাইভেট যানবাহন ও পথচারীরা এই পথে চলাচল করবেন।
এছাড়াও কুমিল্লায় টোকেন বাণিজ্য বন্ধ না হলে যানজট বন্ধ হবে না বলেও তীর্যক মন্তব্য করেছেন এমপি বাহার জেলা পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেন এই টোকেন বাণিজ্যের মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনার জন্য। সভায় সিদ্ধান্ত হয় কুমিল্লার প্রধান সড়কে কোন ভ্যানগাড়ি থাকতে পারবে না। ফুটপাত গুলোকে দখল মুক্ত করতে হবে। ৭ সিটের অটোরিকশা বন্ধ থাকবে, ২ সিটের অটোরকিশা চলবে লাইসেন্স নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস নগরীর টমছমব্রীজ এলাকায় থামবে, কান্দিরপাড়ে প্রবেশ করবে না, রাস্তার উপর কোন ইট বালু সিমেন্ট রেখে নির্মাণ কাজ কোন ভাবেই চালানো যাবে না।
সভার প্রধান অতিথি এমপি বাহার কুমিল্লা সিটি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন, আজকের পর থেকে কুমিল্লা সিটিতে যেসব মার্কেট আছে বেইজম্যান্ট পার্কিং নিয়ে অনুমোদন নিয়েছে কিন্তু তাদের যানবাহন পার্কিং করার সুবিধা নেই- সেই সব বেইজমেন্টগুলোতে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করে ভাড়া দেয়া হয়েছে সেগুলো থেকে বেইজমেন্ট পার্কিং মুক্ত করা করতে হবে। প্ল্যান বহির্ভুতভাবে সকল স্থাপনার কাজ বন্ধ রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, কারা সড়কে চাঁদাবাজি করেন তাদের তথ্য আমাদের জানা আছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে চাই। আমরা প্রতিনিয়ত সড়কে নানা অনিয়মের দায়ে মামলা জরিমানা করে যাচ্ছি- সড়কে শৃঙ্খলায় তা অব্যাহত থাকবে।
এএজেড