টাঙ্গাইলে ইসলাম ধর্মের পরীক্ষায় হিন্দু ধর্মের প্রশ্ন
টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় এসএসসির মডেল টেস্টে ইসলাম ধর্মের পরীক্ষায় হিন্দু ধর্মের প্রশ্ন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (১৩ মার্চ) সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের বাগবাড়ি চৌবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনাটি ঘটে। তবে এ ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত দাবি করে পুনরায় বুধবার (২২ মার্চ) নতুন প্রশ্নপত্রে পুনরায় পরীক্ষাটি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে এর প্রতিবাদ করায় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিত ও পুনরায় ওই পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়। বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও শুভান্যুধায়ীরা এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষকদের প্রাতিষ্ঠানিক শাস্তি দাবি করেছে।
এদিকে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না জানিয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রোকেয়া খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) সকালে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের বাগবাড়ি চৌবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ২০০ জন। অভিযোগ উঠেছে মাথাপিছু অতিরিক্ত ৫০০ টাকা হারে মাসিক বেতনে বিদ্যালয়ের ১৫০ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে কোচিং করানো হচ্ছে।
প্রশ্নপত্র কাণ্ডে পরীক্ষার্থীরা জানায়, সোমবার (১৩ মার্চ) ছিল তাদের ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা পরীক্ষা। কেন্দ্রে প্রশ্ন পাওয়ার পর তারা দেখতে পায় ইসলাম ধর্ম পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে হিন্দু ধর্মের প্রশ্ন। বিষয়টি নিয়ে তারা প্রতিবাদ করায় পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ করেছেন কর্তৃপক্ষ। এরপর কর্তৃপক্ষ জানায় এই পরীক্ষার তারিখ পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে বিতরণের আগে শিক্ষকরা কেন তা যাচাই করলেন না- এমন প্রশ্ন তুলেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
এ প্রসঙ্গে কাতুলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি হিন্দু ধর্মের প্রশ্ন দিয়ে ইসলাম ধর্ম পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি এলাকায় ছিলেন না, পরবর্তীতে কি হয়েছে তা তিনি কিছুই জানেন না। তবে সাংবাদিকদের ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
কাদের, ইউসুফসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবকের অভিযোগ, তাদের সন্তানরা ক’দিন পরই এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাদের ফলাফল ভালো হওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিদ্যালয়ে কোচিং করানো হচ্ছে। প্রতি মাসে কোচিং ফি বাবদ টাকাও নিচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের মান যাচাই করতে বিদ্যালয় থেকে মডেল টেস্ট পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে।
তারা জানান, সোমবার (১৩ মার্চ) ছিল ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা পরীক্ষা। ওই পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দেখতে পায় ইসলাম ধর্ম পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে হিন্দু ধর্মের প্রশ্ন। প্রশ্ন পড়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করার পর প্রশ্নপত্রটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ দায়িত্বরত শিক্ষকরা দেখতে পান।
পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়ে অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করলে তিনি অভিভাবকদের জানান- প্রশ্নগুলো ঢাকা থেকে কিনে এনে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে সমস্যাটি হয়েছে।
অভিভাবকরা আরও জানান, এটি (ইসলাম ধর্ম পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে হিন্দু ধর্মের প্রশ্ন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার লোকজন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে চরম অবহেলা করেছেন বলে তার শাস্তি দাবি করছেন।
ইসলাম ধর্ম পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে হিন্দু ধর্মের প্রশ্ন থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, রাজধানী ঢাকার প্রশ্নঘর থেকে ২৫ টাকা দরে প্রতি সেট প্রশ্নপত্র কেনা হয়েছে। অন্যান্য পরীক্ষার প্রশ্ন ঠিক থাকলেও ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার প্রশ্নপত্রে এমন ভুল হয়েছে। আগামী ২২ মার্চ নতুন প্রশ্নপত্রে পুনরায় পরীক্ষাটি নেওয়া হবে। বিষয়টি প্রশ্নঘর মালিক পক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নায়েব আলী সরকার জানান, এটি একটি অনাকাঙ্খিত ভুল। পরবর্তীতে সতর্ক থাকার জন্য শিক্ষদের বলা হয়েছে। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রোকেয়া খাতুন জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না। বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) সকালে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআইএইচ