হাতির অভয়াশ্রমে অভিযান, ২৫ একর বনভূমি দখলমুক্ত

কক্সবাজারের রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির চেইন্দা খোন্দকারপাড়ার পশ্চিমে প্রস্তাবিত ২৫ একর পাহাড়ী জমি দখলমুক্ত করেছে বনবিভাগ।
স্থানীয় প্রভাবশালী আবু তাহের, সাইদুল আলম ও আজিজুল হকসহ বেশকিছু প্রভাবশালী মিলে গড়ে তুলেছেন বিশাল সাম্রাজ্য। রোপন করেছেন প্রায় লক্ষাধিক ফল ও সবজি গাছের চারা। দখলে নিয়েছেন প্রায় ৭০/৭৫ একর জমি। সেই জমিতে রোপন করা হয়েছিল পানের বরজ, পোল্ট্রি ফার্ম, মৎস্য খামার, ডেইরি ফার্ম ও বরইসহ বিভিন্ন ফলের চারা। শুধু তাই নয়, পাহাড় কেটে ৩/৪ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করেছে বনখেকোরা। এমনকি সেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়েছেন অনেক দূর থেকে। যেখানে কিছুদিন আগে ও ঘন সবুজ জঙ্গল ছিল। ছিল হাতিসহ জীবজন্তুর অভয়াশ্রম। কিন্তু আজিজুল হক বলেন, বনবিভাগ ওই জমি তাকে ভোগ দখল করে ক্ষেত খামার করতে বলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজিজুল হক প্রায় ১৫ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি ষ্ট্যাম্পমূলে বিক্রি করে দিয়েছেন। সেখানকার বনভূমি জবরদখলের তালিকায় আছেন সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইউনুচ ভুট্টাসহ প্রায় ২৫/৩০ জন।
স্থানীয় ফরিদুল আলম বলেন, চেয়ারম্যান ইউনুচ ভুট্টা ও তার পালিত প্রভাবশালী চক্র দেদারসে পাহাড়ী ভূমি দখল করে প্লট করে বিক্রি করছেন।
তিনি আরও বলেন, বনভূমি দখলে থাকা প্রভাবশালীদের রয়েছে সশস্ত্র লাঠিয়াল বাহিনী। তারা জবরদখল করা পাহাড়ে সব সময় সশস্ত্র অবস্থায় থাকে। ফলে বনকর্মী ও সাধারণ লোককে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে যাতায়াত করতে হয়।
সর্বশেষ মঙ্গলবার ((১৪ মার্চ) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে কক্সবাজার রেঞ্জের চেইন্দা বিটের চেইন্দা মৌজার সরকারি বনভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ চারা রোপনের মাধ্যমে বনভূমি জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করতে দিনভর অভিযান চালায় বন বিভাগ। অভিযান শেষে প্রায় ২০-২৫ একর বন ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বিট কর্মকর্তা ফসিউল আলম শুভ একাধিকবার বাঁধা প্রদান করে জবরদখল কার্যক্রম প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলেন। এর পরও জবরদখলের চেষ্টা অব্যাহত থাকায় পানের ছড়া ও ধোয়াপালং রেঞ্জের সকল ষ্টাফ এবং সিপিজিদের সমন্বয়ে সেখানে চালানো হয় অভিযান। ইতিমধ্যে উক্ত স্থানে সরকারিভাবে নার্সারী সৃজনের কাজ চলছে এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরেব প্রস্তাবিত বাগানের সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি বছরই বনায়ন সৃজনের মাধ্যমে জবরদখল উচ্ছেদ পূর্বক বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয় ব্যাহত হওয়া বনভূমি ।
বাকি জবরদখলে থাকা বনভূমি ও উদ্ধারের পর বনায়ন সৃজন করার কাজ করা হবে বলে জানান রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা।
এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরওয়ার আলম বলেন,স্বল্প জনবল নিয়ে বিশাল বনভূমি রক্ষা করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনাঞ্চল রক্ষা করতে গিয়ে অনেক বন কর্মকর্তা-কর্মচারী হতাহত হয়েছে বিভিন্ন বিটে। তারপর ও জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করছি বন রক্ষায়।
তিনি আরও বলেন, বনখেকোদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে মামলা করে যাচ্ছি আমরা। অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদও করেছি। সর্বশেষ কথা হচ্ছে বন বিভাগের একার পক্ষে শতভাগ বন রক্ষা করা সম্ভব নয়।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন সমাজকর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা বনভূমি দখলে মরিয়া। এমনকি বনভূমি দখলকারীদের পক্ষে অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা এসে তদবির করে থাকেন। তাই বনবিভাগের একার পক্ষে যেটুকু করা সম্ভব সবটুকু করছি আমরা। কারণ আমাদেরও জীবনের মায়া আছে, পরিবার আছে, তাদের কথা ও ভাবতে হচ্ছে।
এসআইএইচ
