দুদক কমিশনার সেজে প্রতারণা, চক্রের মূল হোতাসহ গ্রেপ্তার ২
পড়াশুনা করেছেন ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু নিজেদের পরিচয় দিতেন দুদক কমিশনার। পোশাকেও ছিল আভিজাত্যের ছাপ। চক্রটির টার্গেট ছিল দুর্নীতি করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা। তাদের পাতা ফাঁদে পড়ে লাখ লাখ টাকা হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ শতাধিক সরকারি কর্মকর্তাও। টানা ১৫ দিনের অভিযানের পরে এই চক্রের মূল হোতাসহ দুইজনকে রাজৈর উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করেছে মাদারীপুরের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানায় মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া দুই প্রতারক হলেন-রাজৈর উপজেলার লুন্দি এলাকার শামসুল হক মিয়ার ছেলে আনিসুর রহমান ওরফে বাবুল (৩৫) ও বাবুলের সহযোগী তারই চাচাচো ভাই একই এলাকার মৃত জয়নাল মিয়ার ছেলে হাসিবুল মিয়া (৪২)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানায়, আনিসুর রহমান ভুয়া দুদক কমিশনার সেজে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। বাবুলের টার্গেট থেকে বাদ যায়নি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ বড় বড় ব্যবসায়ীরা। মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এসব কর্মকর্তার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আদায় করত চক্রটি। অবশেষে এক সরকারি কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে টানা ১৫ দিনের অনুসন্ধানে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এই চক্রের মূলহোতা বাবুল ও তার সহযোগী চাচাচো ভাই হাবিবুল মিয়া। তারা দুজন রাজধানী ঢাকা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সারাদেশেই এই প্রতারণার কাজে লিপ্ত ছিল।
অভিযান পরিচালনাকালে ঘটনাস্থল থেকে মোবাইল, একাধিক সিম কার্ড ও নগদ ১০ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়। পরে ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক আবুল কাশেম খান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, প্রতারক আনিসুর রহমান বাবুলের ভালো একটি গুণ আছে। তিনি ভালো গান করেন, এর সাথে তার আরও একটি পরিচয় তিনি একজন ভয়ানক প্রতারক। এই চক্রের আরও কয়েকজন সদস্য রয়েছে বা চক্রের সদস্যরা কোথা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে, প্রশিক্ষক কারা? এসব বিষয় ধরে পুলিশ কাজ করছে এবং প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে গ্রেপ্তার দুইজনকে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় প্রতারক চক্রের মূল অভিযুক্ত আনিসুর রহমান বলেন, ‘যারা দুর্নীতি করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করত, শুধুমাত্র তাদের টার্গেট করে মোবাইলে কল দিয়ে ভয় দেখাতাম আমরা। পরে কেউ কেউ বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিত। আবার অনেকেই দিত না। কিন্তু আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতাম। এ বিষয়ে আমরা অনেকেই ঢাকা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলার গোয়েন্দা পুলিশের উপরির্দশক (এসআই) আবুল কাশেম খান বলেন, এই চক্রের সাথে আরো কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে আমাদের টিম কাজ চলছে। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই চক্রের সব সদস্যদের ধরে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। গ্রেপ্তার দুইজনকে দুপুর ৩টায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মনিরুজ্জামান ফকির, অতিরিক্ত পুলিশ (মিডিয়া) মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
এসআইএইচ