টাঙ্গাইলে স্কুলছাত্র হত্যা
‘তোমরা পোলাডারে আইনা দাও’
পড়াশোনার খরচ ও পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে প্রতিবন্ধী বাবার অটোভ্যান নিয়ে আয়-রোজগারের আশায় বের হয়েছিলেন জাহিদুল ইসলাম (১৪) নামের এক স্কুলছাত্র। সেই অটোভ্যান নিয়ে বের হওয়াই কাল হলো তার। অটোভ্যানটি ছিনতাইয়ের লক্ষ্যে কাঁচি দিয়ে গলা কেটে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। রাস্তার পাশে পড়ে থাকে রক্তাক্ত অবস্থায় তার নিথর মরদেহ। পরে স্থানীয়রা অজ্ঞাত মরদেহ হিসেবে পুলিশকে খবর দেয়।
বুধবার (১ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর-গোপালপুর সড়কের পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড়া ইউনিয়নের পাঁচটিকড়ি দক্ষিণপাড়া এলাকায় স্কুলের পাশে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়দের সংবাদে পুলিশ জাহিদের মরদেহটি উদ্ধার করে।
জাহিদুল ইসলাম ভূঞাপুর উপজেলার বলরামপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী সুজন তালুকদারের ছেলে। তিনি বলরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র।
ষষ্ঠ শ্রেণির স্কুলছাত্র জাহিদ হাসানের হত্যাকারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের পর আইনের আওতায় এনে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে রবিবার (৫ মার্চ) সকাল ১১টায় বলরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন তার সহপাঠী, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও এলাকাবাসী। মানববন্ধন শেষে কয়েক শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ক্লাস বর্জন করে বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া জাহিদ হাসানের মা জাহানার বেগম বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ, অভাবের সংসার। ঠিকমতো পোলাডারে লেহাপড়ার খরচ দিবার পারি না। তাই পোলাডায় মাঝেমধ্যে তার বাবার অট্যোভ্যানটা নিয়া খরচ জোগাতে ভ্যান চালাইতো। সেদিন সন্ধ্যায় বের হলে কয়েক ঘণ্টা পর পোলাডারে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়। যারা হত্যা করছে তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসি চাই। তা না পারলে তোমরা পোলাডারে আইনা দাও।’
জাহিদের সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা বলেন, জাহিদ আমাদের সহপাঠী ও স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিল। তার বাবা প্রতিবন্ধী। স্কুলে পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেত ওর বাবা। তাই অটোভ্যান চালিয়ে নিজের খরচ ও পরিবারকে সহযোগিতা করত সে। তার ভ্যানটি ছিনতাই করে সন্ত্রাসীরা সহপাঠীকে গলা কেটে হত্যা করেছে। জাহিদ হত্যাকারীদের চিহ্নিত ও দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে ফাঁসি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া উপস্থিত বক্তারা বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণি মেধাবী স্কুলছাত্র অটোভ্যানচালক জাহিদ হত্যার ঘটনার ছয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তুহত্যাকারীরা এখনো শনাক্ত বা গ্রেপ্তার হয়নি। এটি দুঃখজনক। যারা জড়িত রয়েছে তাদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে বিচারে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করব।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বলরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ডা: মো. সাইফুল ইসলাম লোটন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান, শিক্ষক লিয়াকত হোসেন, শাহীনা আক্তার, স্থানীয় ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান বিপ্লব, সাংবাদিক আল-আমিন শোভন, সাবেক ইউপি সদস্য মিনহাজ উদ্দিন, এলাকাবাসীর পক্ষে শাহীন মিয়া, নিহতের বাবা-মা সুজন তালুকদার ও জাহানারা বেগম প্রমূখসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।
এসআইএইচ