পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ২, সালানা জলসা বন্ধ ঘোষণা
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী (৩, ৪ ও ৫ মার্চ) ‘সালানা জলসা’কে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজনের মৃত্যু এবং পুলিশ, সাংবাদিক আন্দোলনকারীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও বিক্ষোভকারীদের হামলায় বিদ্যুতের কয়েকটি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জেলা শহরের কিছু এলাকায় বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। পরে জেলা শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়।
এ ঘটনায় রাতেই সালানা জলসা বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। মাইকিং করে আন্দোলনকারীদের বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম।
নিহতরা হলেন-পথচারী আরিফুর রহমান (২৭) ও ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান (২২)। এদের মধ্যে জাহিদ হাসান আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তার বাড়ি নাটোর জেলার বনপাড়া এলাকায়। অপরজনের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
শুক্রবার (৩ মার্চ) জুমআর নামাজের পর থেকে কাদিয়ানীদের সালানা জলসা শুরু হয় । বিষয়টি জানা মাত্রই বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীরা। পরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর পৌরসভা এলাকার কয়েকটি মসজিদ থেকে বিক্ষোভকারী মুসল্লিরা পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় জড়ো হন। সেখান থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে পৌরসভার আহামদনগর এলাকায় আহমদিয়াদের সালানা জলসা অভিমুখে রওনা দেন। এ সময় পুলিশ মিছিলটি আটকে দেয়। এর জেরে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় আরিফুর রহমান গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরে ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান (২২) নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়।
এদিকে একই দিন বিকালে বিক্ষোভকারীদের একাংশ আহমদিয়াদের ২৫-৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও রংপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্য এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ক্বারী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল পৌনে ৪টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছি। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেই। কিন্তু আজ (শুক্রবার) আমাদের কোনো বিক্ষোভ মিছিল ছিল না। প্রশাসনের ফোন পেয়ে আমরা বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে নিয়ে আসি। কে বা কারা মিছিল করেছে জানি না। আমরা কোনো সংঘর্ষ, হামলা ও অগ্নিসংযোগ করিনি।
আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসা আয়োজন কমিটির গণমাধ্যম কর্মকর্তা মাহমুদ আহমেদ সুমন বলেন, ‘আমরা প্রতি বছরই সালানা জলসা করি। কারো কোনো সমস্যা করিনি। হঠাৎ কিছু বিপথগামী মানুষ আমাদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে। বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা আমাদের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
এ ব্যাপারে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও ১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা আহমদিয়াদের সালানা জলসা বন্ধ করতে বলেছি। হামলাকারীদের শনাক্তে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এসআইএইচ