ময়মনসিংহে এক বছরে নির্যাতনের শিকার ৭৭২ নারী ও শিশু
বছরের শেষ সময়ে ঘুমন্ত মেয়ের গলায় ছুরি ধরে মাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে দুই গারো স্কুলছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় যা পুরো সম্প্রদায়কে বিচলিত করে তোলে। কেবল এ দুটি ঘটনা নয়, ময়মনসিংহে এক বছরে মোট ৭৭২ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
শুধু সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন নয়, উত্ত্যক্ত, অপহরণ ও ধর্ষণচেষ্টার ঘটনাও রয়েছে অনেক, যা ২০২১ সালে ময়মনসিংহে বৃদ্ধি পেয়েছে।
নারীর ওপর সহিংসতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসামিদের বিচার দ্রুত শেষ না হওয়া এ প্রবণতাকে বাড়িয়ে তুলছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালের ৭৭২ মামলার মধ্যে ১৩৭ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ভালুকায়। ওই উপাজেলায় ৭২টি ধর্ষণের মামলা হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ৪০ শিশু। তার পরের অবস্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ সদরের কোতোয়ালি থানা। এ থানা এলাকায় ৫৫টি ধর্ষণ মামলা হয়। যেখানে ৩১ জন শিশু। সবচেয়ে কম ধর্ষণের ঘটনা নান্দাইল উপজেলায়। ওই উপজেলায় মাত্র ছয়টি ধর্ষণের ঘটনা আছে।
ভালুকায় কেন এত নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে-তার কারণ হিসেবে থানার ওসি মাহমুদুল হাসান ঢাকাপ্রকাশকে জানান, শিল্প অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় অনেক নারীর আগমন বেশি। কারখানায় কাজ করার সুবাদে প্রেমের সম্পর্কের জেরে মেলামেশা করলেও পরে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দেয়। এ ধরনের ঘটনা বেশি।
নারীর ওপর সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে দ্রুত বিচার না হওয়াকে দায়ী করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ময়মনসিংহের সভাপতি মনিরা বেগম অনু জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের বিরুদ্ধে থাকা আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে প্রবণতা কিছুটা কমবে।
আনন্দ মোহন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জরিনা মজুমদার বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির কারণ পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ কম থাকা, শিক্ষার অভাব এবং ঘটনা ঘটার পর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় ধর্ষণ বাড়ছে।’
মানবাধিকার জোট ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু জানান, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানো গেলে এ প্রবণতা রোধ হতে পারে।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকৃত ধর্ষণের ঘটনা খুব কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রেমের সম্পর্ক থেকে পরবর্তী সময়ে ধর্ষণ মামলা হয়।’
/এএন