আগুনে পুড়ে বিনষ্ট হচ্ছে কুবির পাহাড়ি সৌন্দর্য

লাল মাটির ছোট ছোট পাহাড়ে ঘেরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই ক্যাম্পাসে পাহাড়ের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বার বার আগুন লেগে। আগুনের সূত্রপাত হয় কখনো ময়লায় আবার কখনো মাদকসেবিদের দেওয়া আগুন থেকে। আগুনের ফলে পাহাড়ের গাছপালা ও বসবাস করা প্রাণীর জীবন বিপন্ন হচ্ছে। কারা আগুন লাগাচ্ছে সে বিষয়ে অবগত হতে পারেনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রসাশন। এ ছাড়াও এ বিষয়ে কোনো স্থায়ী সমাধান দিতে পারেনি প্রশাসন। পাহাড়ের সৌন্দর্য নষ্টের ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করছে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১ মার্চ) সকাল ১১টায় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের পশ্চিম পাশের পাহাড়ে বিশাল এলাকাজুড়ে আগুন দেখা যায়। এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সন্ধ্যা ৭টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হলের ময়লা ফেলার স্থান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এই সময় আগুনে পাহাড়ের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে।
বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ে আগুন লাগার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ওবাইদুল্লাহ খান জানান, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ পাহাড়গুলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক। বারবার পাহাড়ে এই আগুন লাগার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। আশা করব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাহাড়ের বিষয়ে দায়িত্বশীল হবে এবং এসব ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে ব্যবস্থা নিবে।
দত্ত হলের প্রাধ্যক্ষ ড.মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনা শুনার সাথে সাথে আমি প্রশাসনকে অবহিত করি। বারবার আগুন ধরার বিষয়টি আসলে চিন্তার কারণ। কারণ আমাদের ছাত্রদের নিরাপত্তা বিষয়টি দেখতে হবে। আমরা বসে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেব।
প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী রানা (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্যমতে আগুন স্তুপ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। বারবার আগুন ধরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাহাড়ে মাঝেমধ্যে এগুলো হয়। আমরা তৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছি।
নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, এটার সাথে নিরাপত্তার কোনো সংযোগ নেই।
কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ ফায়ার স্টেশনের অফিসার মীর মোহাম্মদ মারুফ বলেন, ময়লার স্তূপ থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়েছে। হতে পারে কেউ দুষ্টমীর ছলে আগুন লাগিয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের অর্ধেক অংশ জ্বলে গিয়েছে। আমরা খবর পেয়ে দ্রুত এসেছি। ততক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা রক্ষাসহ সবার প্রচেষ্টায় আগুন নেভানো হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় লালন চত্বরে আগুন দেখতে পান বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা। সেখানে দীর্ঘক্ষণ আগুন জ্বলে। এতে পাহাড়ের বিভিন্ন অংশের গাছপালা পুড়ে যায়। এদিকে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে না পারলেও বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মাদকসেবিদের গাঁজার আগুন থেকেই এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গাঁজা সেবনের চিহ্নও পাওয়া গেছে সেখানে। শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন, পাহাড়ের ওই অংশটিতেই মাদকসেবিরা বেশি যাতায়াত করে। বহিরাগতদের আনাগোনাও বেশি সেখানে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে কুবির পাহাড়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালের ১৪ মার্চ কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার পাশের পাহাড়ে আগুন লাগলে পরিচ্ছন্নতার জন্য আগুন দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে কর্তৃপক্ষ। এরপর ২০২১ সালের ১৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পাশের একটি পাহাড়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তখন বহিরাগত মাদকসেবিদের দ্বারা এই অগ্নিকাণ্ড ঘটার ধারণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০২২ সালের অগ্নিকাণ্ডেও প্রশাসন একই কথা বলেছিল। তবে মাদকসেবিদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষকে।
এসআইএইচ
