'চাল নিতে এসে দেখি জেলে তালিকাতেই নাম নাই'
ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে জাটকা রক্ষায় ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় বরগুনা জেলা না থাকলেও চাল পাচ্ছেন কয়েক হাজার জেলেরা। এ সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেদের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে মোট ১৬০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। প্রান্তিক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিবন্ধিত জেলেদের কার্ড যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে এসব চাল বিতরণ করছেন জনপ্রতিনিধিরা।
এদিকে বরগুনা সদর উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নে চলতি জাটকা রক্ষার মৌসুমের ফেব্রুয়ারি মাসের চাল বিতরণে প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষদের উৎকোচ ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চাল বিতরণ করার অভিযোগ তুলেছেন কয়েক শতাধিক দাবিদার জেলে পরিবার। তাদের দাবি, বিগত মৌসুমগুলোতে তারা সরকারের নির্ধারিত বরাদ্দের চাল পেয়ে আসলেও এই মৌসুমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
এনিয়ে বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদে চাল বিতরণকালে হট্টগোল শুরু হয় জেলে ও ইউপি সদস্যদের মধ্যে। একপর্যায়ে জেলেদের একাংশ উপজেলা মৎস্য অফিসের সামনে এসে অবস্থান নেন।
জব্বার মুসুল্লি নামের এক জেলে বলেন, আমাদের পেশাই জেলে। মৃত্যুর আগপর্যন্ত এই পেশাতেই থাকবো। আমরা সরকারের বিধিনিষেধ মেনে মাছ শিকার করি। অথচ আজ যারা জেলেই না তারা টাকাপয়সা ও স্বজনপ্রীতির মধ্যদিয়ে তালিকাভুক্ত হয়ে চোখের সামনে দিয়ে চাল নিয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ায় সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে কষ্টে আছি। এ অনিয়মের বিচার করবে কে?
পান্না মিয়া নামের আরেকজন বলেন, চাল নিতে এসে দেখি জেলে তালিকাতেই আমাদের নাম নাই। বিগত বছরগুলোতে তো আমরা চাল পেতাম। এবছর দেখি আমাদের বাদ দিয়ে যারা জেলেই না তাদের তালিকাভুক্ত করে চাল দেওয়া হচ্ছে। শুনেছি চারমাস চাল দেবে সরকার। এই মাসে না পেয়েছি কষ্ট নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি সামনের মাসগুলোতে যেন বাদ পড়া প্রকৃত জেলেরা চাল পায় সে ব্যবস্থা তারা করেন। নয়তো বালবাচ্চা নিয়ে কষ্টে থাকতে হবে।
এ বিষয়ে বালিয়াতলী ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জব্বার সর্দার বলেন, আমার ওয়ার্ডে পুরান ২৬০ জন জেলে ছাড়াও এবার ৪২ জনার মতো জেলে বেড়েছে। চাল না পাওয়া অনেকেই হট্টগোল করেছে। আমিসহ অন্যান্য ইউপি সদস্য যাদের বিরুদ্ধে টাকাপয়সা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে তা সত্য না। মূলত তালিকার জন্য যে নাম দিয়েছিলাম সেখান থেকে মৎস অফিসের লোকেরা অনেক নাম রাখেননি। তাই বাদ পড়াসহ জেলে দাবি করা লোকেরাও যা ইচ্ছা তাই বলে বেড়াচ্ছে।
এ বিষয় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসির বলেন, আমার ইউনিয়নের ১৬২৮ জন জেলে চাল পাচ্ছে। যদি কোন প্রকৃত জেলে কোন কারনে এই মাসে চাল না পেয়ে থাকেন সামনের মাসে কিংবা আগামীতে তারা যেন চাল পান আমি সে বিষয়ে খোঁজ নেবো। এছাড়াও কোন অনৈতিক লেনদেন বা স্বজনপ্রীতির সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে বরগুনা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কমকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, সদর উপজেলা এবার ৮২৫৭ জন জেলেকে চাল দেয়া হচ্ছে। কেয়ামত পর্যন্ত এমন অভিযোগ থাকবে। ইউপি সদস্যরা যে তালিকা করেছে আমরা তা মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা করেছি।
এখানে যদি কোন প্রকৃত জেলে বাদ পরে থাকে তবে তার নাম ইউপি সদস্যরা না দেয়ায় বা মাঠপর্যায়ে তাদের তথ্য না পাওয়ায় বাদ পড়তে পারে। এমটা হলে দুখজনক এবং আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি প্রকৃত জেলেরা কেউ বাদ পড়লে তারা যাতে সামনে পেতে পারে।
এএজেড