বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে নষ্ট হচ্ছে পাণ্ডুলিপি
রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে নষ্ট হচ্ছে কয়েক হাজার মূল্যবান পুঁথির পাণ্ডুলিপি। সংরক্ষণের অভাবে প্রাচীন এসব পাণ্ডুলিপি নষ্ট হতে বসেছে। এগুলো এখন প্রদর্শনও করা হয় না। স্টোর রুমের তাকে পড়ে আছে পাণ্ডুলিপিগুলো। এসব পুঁথির ডিজিটাল কপিও নেই।
জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রথম এই জাদুঘরে প্রস্তর ও ধাতব প্রত্ন ভাস্কর্য, টেরাকোটা, মুদ্রা ও পাণ্ডুলিপি, ধাতব সামগ্রী এবং শিলালিপি মিলে প্রায় ১৯ হাজারের মতো প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ নিদর্শন প্রদর্শিত হয়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় সিংহভাগ রাখা হয়েছে স্টোর রুমে। প্রাচীন পুঁথির পাণ্ডুলিপিগুলো রাখা হয়েছে একটি ঘরে। সেগুলোও প্রদর্শনের জন্য নয়। যথাযথ সংরক্ষণের আভাবে এগুলো নষ্টের পথে। কিছু পাণ্ডুলিপি ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।
জাদুঘরের তথ্যমতে, এখানে সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন পুঁথি সাহিত্যের পাণ্ডুলিপি আছে। যার অধিকাংশ সংস্কৃত, প্রাকৃত ও আদি বাংলা ভাষায় রচিত। এর মধ্যে সংস্কৃত আছে ৩ হাজার ৯০০টি। আর বাংলা আছে ১ হাজার ৭০০টি। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ১২৭৩ খ্রিস্টাব্দ এবং ত্রয়োদশ শতকের কোনো এক সময়ের তালপাতায় লিখিত ও রঙিন চিত্রকর্ম দ্বারা শোভিত দুটি অষ্ট সাহস্রিকা প্রজ্ঞা পারমিতা পাণ্ডুলিপি আছে এখানে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ১২টি প্রদর্শিত হচ্ছে। বাকিগুলো আছে জাদুঘরের স্টোর রুমে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এ জাদুঘরের পাণ্ডুলিপির ঘরে গিয়ে দেখা যায়, ২৮টি তাকে প্রাচীন সাহিত্যের নির্দশন সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো কোনোটি ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। ২৮ নম্বর তাকে একটি পুঁথি খুলে দেখা গেল, সেটি তাল পাতার পুঁথি। তবে ঘুণে ধরেছে। প্রতিটি পাতায় রয়েছে ঘুণে খাওয়া ফুটো। হাজার বছরের এসব ঐতিহ্য নষ্ট হতে বসেছে।
এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘জাদুঘরে আমাদের অনেক নির্দশন আছে। এগুলো কোনোটি আবার বিশ্বজোড়া পুঁথি। কিন্তু এগুলো তালপাতার ও অন্য উপকরণের হওয়ার করাণে সেগুলো এখন নষ্টের পথে। তবে এগুলোকে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেখাতে হবে। প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই এগুলোর ডিজিটাল কপি করা প্রয়োজন।’
জানতে চাইলে জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. আলী রেজা মুহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘সব প্রত্ন নির্দশন স্টোর রুম থেকে বের করে ডিসপ্লের জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান দেওয়া হয়েছে। এ জন্য মূল ভবনের বাইরে ফাঁকা জায়গায় হাইরাইজ বিল্ডিং নির্মাণ বা মূল ভবনের পেছনে পরিচালকের বাস ভবনের উপরে বহুতল ভবন নির্মাণ করার জন্য মাপজোখ করা হয়েছে। দ্রুতই এর বাস্তবায়ন হবে। তখন সবগুলো আমরা প্রদর্শন করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জিনিসের একটি মেয়াদকাল আছে। আমাদের এখানকার পুঁথিগুলো নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য একটি ডিজিটাল স্ক্যানারও চেয়েছি। আশা করছি সেটি পাবো।
এসএসকে/এএন