৪০ বছরেও পুনঃখনন হয়নি রামগঞ্জের তিন কিলোমিটার খাল
৪০ বছরেও সংস্কার হয়নি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল। খালটি ‘শাহাব উদ্দিনের খাল’ নামে পরিচিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে খালের বিভিন্ন স্থানে পাড় দখল হয়ে যাওয়ায় এখন এটি নালায় পরিণত হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে সেচ প্রকল্প, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। বর্ষা মৌসুমে খালটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, ফলে বন্ধ থাকে আমন চাষাবাদ। এতে করে প্রায় ১২০০ একর জমির কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তবে খালটি দখলমুক্ত করাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পুনঃখননের আশ্বাস দিলেন লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম জয়পুরা। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ গ্রামে ইরি চাষাবাদের জন্য ১৯৮২ সালে তৎকালীন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত শাহাব উদ্দিনসহ স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে জয়পুরা হাজীবাড়ি থেকে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ বর্ডার পর্যন্ত এবং জয়পুরা কাইতের বাড়ি থেকে ডাকাতিয়া নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি খনন করা হয়। পরবর্তীতে যার নামকরণ করা হয় শাহাব উদ্দিনের খাল। খালটি খননের ফলে রামগঞ্জের জয়পুরা গ্রামসহ সীমান্তবর্তী চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কৃষি উৎপাদনে আমূল পরিবর্তন আসে। কিন্তু খালটি খননের পর থেকে আজ পর্যন্ত সংস্কার না হওয়ায় এটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে জয়পুরা গ্রামের প্রায় ১২০০ একর জমির চাষাবাদ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।
চাষিরা জানান, র্দীঘ ৪০ বছরেও খালটি সংস্কার না হওয়ায় এবং বিভিন্ন স্থানে খালের পাড় দখল হয়ে যাওয়ায় খালটি এখন প্রায় মৃত। ইরি-বোরো চাষাবাদের সময় দূরবর্তী কাটাখালি খাল থেকে পানি এনে চাষাবাদ করতে হয় তাদের। এতে সময় মতো তারা ইরি রোপণ করতে পাচ্ছেন না। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
এদিকে স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো প্রদক্ষেপ না নেওয়ায়, দখলদারদের কবলে পড়ে খালটি এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। তিন ফসলি জমিতে এখন শুধু ইরি চাষাবাদই হয়। খনন না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে খাল দিয়ে পানি নামতে পারছে না। এতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ফলে আমন ও রবি শস্য চাষাবাদ ব্যাহত হয়। এতে বছরের দুটি মৌসুমই অনাবাদি থেকে যায় এ গ্রামের বিস্তীর্ণ কৃষি জমি।
দুই একর জমিতে ইরি ধানের আবাদ করেছেন জয়পুরা গ্রামের কৃষক মো. শাহজাহান। তিনি বলেন, সময়মতো সেচের পানি না পাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের ১ মাস পর ইরি রোপণ শুরু করেছেন তিনি। এতে ফলন আসতেও দেরি হবে। আবার বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে আমন চাষাবাদ বন্ধ রাখতে হয় তাদের। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা।
স্থানীয় কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, জমির পাশে শাহবুদ্দিনের খাল থেকে পানি না পাওয়ায়, দ্বিগুণ টাকা খরচ করে দূরবর্তী কাটাখালী খাল থেকে পানি এনে ইরি চাষাবাদ করতে হচ্ছে তাদের। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় তাদের। খালটি পুনঃখনন করা হলে খালের পানি ব্যবহার করেই সময় চাষাবাদ করা যেত। এতে কম খরচে উৎপাদনও ভালো হতো। তারাও আর্থিকভাবে উপকৃত হতেন।
স্থানীয় সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বলেন, খালটি খনন হওয়ার ৪০ বছরেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার কেউই খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়নি। এতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেচ প্রকল্প কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। আগে এসব জমিতে তিন ফসল হতো, এখন এক ফসল হতে কষ্ট হয়। এ খালটি খনন না হওয়ায় আমন মৌসুমে আমনও হচ্ছে না, ইরি মৌসুমে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ খালটি পুনঃখনন হলে ইরিগ্রেশন প্রজেক্টের হাজার হাজার কৃষক উপকৃত হবে।
এদিকে খালটি দখলমুক্ত ও পুনঃখননের বিষয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় মহিব উল্লা নামে এক ব্যক্তি এলাকাবাসীর পক্ষে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমও স্বীকার করলেন, খালটি কাটার পর থেকে সংস্কার না হওয়ায় সময়মতো চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বরাদ্দ না থাকায় তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, শাহাবুদ্দিনের খালের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রান্তিক চাষিদের কথা চিন্তা করে খালটি দখলমুক্ত করাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পুনঃখনন করার আশ্বাস দেন তিনি।
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রান্তিক চাষিদের কথা চিন্তা করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খালটি সংস্কারে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
এসএন