গুইমারায় ভূমিহীনদের খোঁজে অভিনব কৌশল ইউএনও’র
ভূমিহীনদের খোঁজে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করলেন ইউএনও রক্তিম চৌধুরী। এসব এলাকার বেশির ভাগ মানুষের বাড়ি হচ্ছে পাখির বাসা, ছন পাতার ছানি, একটু বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। এ জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দিতে অসহায় পরিবারের তালিকা বাছাইয়ে এমন একটি চমকপ্রদ পন্থা অবলম্বন করেছেন গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রক্তিম চৌধুরী, যা দেখে অভিভূত হয়েছে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা।
সরেজমিনে দেখা যায়,বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) বিকালে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ছুটে যান তিনি (ইউএনও রক্তিম চৌধুরী)। খুঁজে বের করেন বেশকিছু অসহায়, হতদরিদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবার। কারণ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের শুরুতে এসব অসহায় পরিবারগুলো বাদ পড়েছিল।
জানা গেছে, গৃহহীনদের যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত গৃহহীনদের ঘর প্রদানের উদ্দেশে দিনের দাপ্তরিক কাজ শেষ করে ওইদিন গুইমারা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ঝর্না ত্রিপুরা ,সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্মল নারায়ন ত্রিপুরা ও ওয়ার্ড মেম্বারকে নিয়ে বের হন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রক্তিম চৌধুরী। সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর ইউনিয়নের কবুতকবুরছড়া,মুসলিমপাড়া, মুলিপাড়া, হাজাপাড়া,ডাক্তারটিলাসহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রামের আনাচে-কানাচে ছুটে যান তিনি। এ সময় বেশির ভাগ ঘর পাহাড়ের উপর, যার কারণে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটেই অনেক পথ যেতে হয়েছে তাঁকে। এরই ভিতরে বেশকিছু ঘর যাচাই করেন তিনি। প্রতিটি ঘরের ভিতর ঢুকে অসহায় পরিবারগুলোর সাথে কথা বলেন এবং তাদের জীবনযাপনের খোজঁ-খবর নেন। এমনকি পরিবারের প্রধান কি করে, আয় কি, ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে সংসারে সদস্য সংখ্যা কয়জন,ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে কি-না, বয়স্ক লোক অসুস্থতায় ভুগছে কি-না-এসব তথ্যগুলো একজন পেশাদার সাংবাদিকের মতো বের করে নেন ইউএনও রক্তিম চৌধুরী।
এ ছাড়াও হাসি মাখা মুখে শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন ইউএনও। খোঁজ নেন শিশুদের লেখাপড়া ও বিদ্যালয় সম্পর্কে। ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলে বেশ আনন্দিত শিশুরাও। তার এই ছুটে চলা যেনো ভূমিহীন, গৃহহীন, দুর্দশাগ্রস্ত ও ছিন্নমূল পরিবারের আশ্রয়ের নির্ভরতা বহন করেছে।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার রক্তিম চৌধুরী বলেন, মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’-মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিতকল্পে সেমিপাকা একক গৃহ নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। দুই কক্ষবিশিষ্ট গৃহ, প্রশস্ত বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট রয়েছে এসব ঘরে। এই ঘর পেতে কোনো টাকার প্রয়োজন হয় না। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার। এ বিষয়টি বার বার সাধারণ মানুষকে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন,সমগ্র দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে মুজিববর্ষে জমিসহ সেমিপাকা ঘর দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্প হতে পারে সামাজিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহায়নের সঙ্গে কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন, শিক্ষা, পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম যুক্ত হয়েছে। একটি গৃহ কিভাবে সামগ্রিক পারিবারিক কল্যাণে এবং সামাজিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্প। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন তথা দারিদ্র্য বিমোচনের এই নতুন পদ্ধতি ইতিমধ্যে ‘শেখ হাসিনা মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
সবশেষে তিনি সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে পরিবারগুলোর চিত্র দেখে একটি আশ্রয়নের শিবির করার অভিলাষ ব্যক্ত করে বলেন,এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষই ‘আশ্রয়ন’ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার দাবিদার। ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবন্ধী পরিবারের প্রধান তরু চাকমা বলেন,আমি গরিব মানুষ। আমার ছেলে-মেয়ে দুটি প্রতিবন্ধী। বৃষ্টি পড়লে পানি পড়ে। গতবার তুফানে আমার ঘর ভেঙে গেছিল। আমার ঘরে ইউএনও ঢুকে সব দেখে গেল। আমি ঘর পাইলেও খুশি না পাইলেও জীবনে কোনো দু:খ নাই।
বৃদ্ধ ভ্যান চালক নারায়ন ধর জানান, ভ্যান গাড়ি চালিয়ে জীবন শেষ। ৫টি ছেলে-মেয়ে নিয়ে এমন ঘরে থাকি কখনো কেউ ঘরে ঢুকে দেখে না ।এবার ইউএনও আমার ঘরে ঢুকে দেখল। এ রকম ইউএনও তো আগে দেখিনি।
এসআইএইচ