দক্ষিণ অফ্রিকায় দুর্ঘটনায় নিহত ৫ জনের বাড়িই ফেনী

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে লরি চাপায় ৫ বাংলাদেশী নিহত ও দুই জন গুরুতর আহত হয়েছে। শুক্রবার ভোরে বাংলাদেশ সময় ৬টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে। নিহতদের মাঝে চারজনের বাড়ি ফেনীর বিভিন্ন এলাকায়।
এদের মাঝে ইসমাইল হোসেন (৩৫) ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিরলী গ্রামের মো. শরিয়ত উল্যাহ ও জাহেদা খাতুনের ছেলে। অপরদিকে নিহত দীন মোহাম্মদ রাজু (৩৩), ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের মমারিজপুর গ্রামের মিলনের নতুন বাড়ির আবদুল মান্নান মিলনের ছেলে।
মোস্তফা কামাল পোপেল (৩৫) দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের দক্ষিণ নেয়াজপুর তমিজ উদ্দিন ভূঞা বাড়ির মৃত সিরাজ উল্যার ছেলে এবং আবুল হোসেন (৪৫) ও নাজিম হোসেন (১০) সোনাগাজী উপজেলার চর মজলিশপুরের অধিবাসী। এদের মাঝে আবুল হোসেন ও নাজিম সম্পর্কে পিতা-পুত্র।
দাগনভূঞার জায়লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিলন পরিবারের বরাত দিয়ে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এরা সকলে ভিসা সংক্রান্ত প্রয়োজনে কেপটাউন যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মালবাহী লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের প্রাইভেটকারকে চাপা দিলে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক লিটন জানান, খবর শুনে আমরা বিরলীতে ইসমাইলের বাড়িতে ছুটে যাই এবং পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দেবার চেষ্টা করি। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় ওই বাড়িতে শোকের মাতম চলছিল বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, মরদেহ দেশে আনতে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হবে।
নিহতদের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলার বিরলী গ্রামের আব্বাস বেপারী বাড়ির শরীয়ত উল্লার ছেলে ইসমাইল হোসেন। ইসমাইলের ভাই মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, সাউথ আফ্রিকার আবদিন থেকে কেপটাউনের ফ্রান্স অ্যাম্বাসির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন ইসমাইলসহ ৭ জন প্রবাসী। পথিমধ্যে বাংলাদেশ সময় সকাল দশটার দিকে একটি চলন্ত লরীর নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে পাঁচজন নিহত হয়।
নিহত ইসমাইল হোসেনের পিতা শরীয়ত উল্লাহ জানান, আমার ছেলে ইসমাইল হোসেন অবিবাহিত। আগামী দুই মাস পরে দেশে আসলে তাকে বিয়ে করানোর প্রস্তুতি চলছে। সে ১১ বছর সাউথ আফ্রিকায় থাকেন। তিনি আরো বলেন, আমার ছেলেকে হারিয়েছি তবে লাশ টি দ্রুত চাই। গুরুতর আহত অবস্থায় আনিসুল হক (মিলন) সহ আরো ১ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত মোস্তফা কামাল পোপেল এর ভাই এডভোকেট মোস্তফা জামাল নওফেল বলেন, ২০১০ সালে জীবিকার তাগিদে আফ্রিকা পাড়ি দেন। একটি দুই বছর বয়সি পুত্র সন্তান রয়েছে। কেপটাউন শহর থেকে এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ সময় ২টার দিকে খবর আসে।
স্থানীয় বাংলাদেশি এবং নিহত ও আহত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনের তথ্য মতে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত আনিসুল হক মিলনকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে কেপ টাউন এয়ারপোর্টে বিদায় জানাতে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দক্ষিন আফ্রিকা প্রবাসীরা জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এর আগে একসাথে সড়ক দুর্ঘটনায় এত সংখ্যক বাংলাদেশীর মৃত্যু কখনো ঘটেনি। এ ঘটনায় দেশটিতে বসবাস করা বাংলাদেশীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া দুইজন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন এবং একজন আহত হয়েছেন বলে জানান। ফেনী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন একজন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এএজেড
