দুই শতক জমিতে বদলে গেছে জীবনের গল্প
বাড়ির সামনের ছোট্ট উঠানটি যেন এক টুকরা সবজি ও ফলের বাগান। দূর থেকে দেখলে নয়ন জুড়াবে যে-কারও। ঘরের চাল আর মাচায় ঝুলছে লাউ, সিম, কুমড়া, উঠানে লালশাক, পালংশাক, বাঁধা কপি, ফুল কপি, মূলা, টমেটো, বেগুনসহ নানা রকম সবজি। বাড়ির আঙিনা ঘেষে কলাগাছসহ বিভিন্ন ফলফলাদি গাছের সমাহার। এর মধ্যে হাঁস-মুরগির ডাকে মুখরিত ঘরগুলো। কেউ কেউ পালন করছেন গরু ও ছাগল।
আর গরু-ছাগলের বর্জ্য থেকে তৈরী করছেন উন্নতমানের জৈব সার। যে সার ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি চাষ করে পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি বাজারজাত করে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ স্বচ্ছলতার মুখ দেখছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুণর্বাসিত প্রান্তিক অসহায় পরিবারগুলো। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গাভা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সোনার বাংলা পল্লীতে গেলে দেখা মেলে এমন-ই দৃশ্যের।
মূলত মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পেয়ে বদলে গেছে গাভাসহ সাতক্ষীরার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান। যেখানে জমি কেনা দুঃস্বপ্ন ছিল, সেখানে বিনামূল্যে ২ শতক জমিসহ বসত বাড়ি পেয়েছেন ভূমিহীনরা। এসব ঘর ও জমি পেয়ে বদলে গেছে সুবিধাভোগীদের জীবনমান। তাদের অনেকেরই জীবন পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে এ অসামান্য উপহার। মাথা গোঁজার নিজস্ব ঠিকানা পেয়ে অনেকেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বদলে ফেলছেন জীবনের গল্প।
সরেজমিনে সাতক্ষীরা সদরের গাভা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সোনার বাংলা পল্লীতে যেয়ে দেখা যায়, সারি সারি রঙিন টিনের আধাপাকা ঘর। ছোট পরিসরে আদর্শ রঙিন ঘর দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এ যেন এক খন্ড শান্তির নীড়। এই নীড়েই সুখের স্বপ্ন গড়েছেন সহায়-সম্বলহীন পরিবারগুলো। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে খেলছে শিশু-কিশোরের দল। পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন কাজে। নারীদের কেউ কেউ ব্যস্ত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও বসতবাড়ির নিজ আঙিনায় গড়ে তোলা সবজি বাগানের পরিচর্যা নিয়ে। বর্তমানে স্বস্তিকর জীবন পেয়ে দারুণ খুশি এক সময়ের ছিন্নমূল এসব মানুষেরা।
দেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখছেন না কেউই। আশ্রয়নের ঘরের পাশে অল্প ফাঁকা জমি কোন না কোন ভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তারা। এখন তাদের চাষকৃত শাকসবজি নিজেদের পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি সবজির কিছু অংশ বাজারে বিক্রি করছেন, আর যারা হাঁস-মুরগী পালন করছেন তারা হাঁস-মুরগি ও হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি করে সংসার খরচ ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছেন বলে জানান তারা।
উপকারভোগীরা বলেন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে তাদেরকে সর্বাত্মক ভাবে সহযোগীতা করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেকে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করে গৃহপালিত পশু-পাখি পালন করছেন। আবার কৃষিবিভাগের সহযোগিতায় বিনামূল্যে সবজির বীজ পেয়ে বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন সবজির চাষ করে এখানকার পুনর্বাসিত পরিবারগুলো এখন নিজেদের পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি বাজারজাত করে স্বচ্ছলতার মুখ দেখছেন বলে জানান তারা।
এসময় সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে উপকারভোগীরা বলেন, একটা সময় আমরা খোলা আকাশের নিচে থাকতাম। তবে প্রধানমন্ত্রী আমাদের দুই শতক জমিসহ ঘর দিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য বড় এক পাওয়া। তবে সরকার যদি একটা গোরস্থানের ব্যবস্থা করতো, তাহলে সেটা আমাদের জন্য অনেক উপকার হতো।
এপ্রসঙ্গে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সামাজিক, নিরাপত্তার নানা কর্মসূচিসহ সব ধরণের সহায়তা ও পুরুষের পাশাপাশি সেখানকার নারীদেরকেও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে নানা ধরণের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ওখানের নারীদের আত্মনির্ভরশীল করতে ইতিমধ্যে সেলাই মেশিনসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আবার অনেককে দোকানঘর তৈরী করে দেওয়া হয়েছে। একারনে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের কোন পরিবার যদি কোনকিছু করতে আগ্রহী হয় তাহলে উপজেলা প্রশাসন তার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সাপোর্টটা দেয়ার চেষ্টা করবে।
এসময় অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, ওদের একটা দাবি গোরস্থান। যেটা পূরণে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেছি। উপযুক্ত জমি পেলে সেটা দ্রুত করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এএজেড