আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১০
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মাছঘাট নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে রাসেল হোসেন (১৪) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। আজ বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামের মিয়ারহাট মাছঘাট এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা বিএম শাহজালাল রাহুল ও ইউপি সদস্য (মেম্বার) নজরুল ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে রুহুল আমিন ও ফারুক ক্বারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
এদের মধ্যে রুহুল আমিন সদর হাসপাতালে ও ফারুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে এ ঘটনায় দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা বিএম শাহজালাল রাহুলসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় রাহুলের অনুসারীরা পুলিশের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে জানা গেছে।
আটক রাহুল দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। আটক অন্যরা- হলেন রাহুলের অনুসারী রাকিব হোসেন, মিনহাজুল ও সুমন হোসেন। বাকি একজনের নাম জানা যায়নি।
নিহত কিশোর রাসেল চরকাছিয়া গ্রামের মনির হোসেন ভুট্টুর ছেলে। সে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলামের ভাতিজা। আহত রুহুল আমিন একই এলাকার আলী সর্দারের ছেলে। অপর আহত ফারুক আওয়ামী লীগ নেতা রাহুলের অনুসারী বলে জানা গেছে।
নিহতের স্বজনরা জানান, সকালে রাসেল ও তার বাবা মনির চর থেকে মিয়ারহাট ঘাটে আসেন। এ সময় ঘাটে রাহুলের অনুসারী ফারুক ক্বারীর সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় রাহুলের অন্য অনুসারী রাকিব হোসেন, মিনহাজুল ও সুমন জড়ো হন। উভয়পক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। হঠাৎ রাকিব ছুরি দিয়ে রাসেলের পেটে আঘাত করে।
এ সময় উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে রাসেল মারা যায়। ঘটনার পর পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থল থেকে রাহুলসহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে পুলিশের হাত থেকে রাহুলকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তার অনুসারীরা। পুলিশ গাছের গুড়ি সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে আটকদের থানায় নিয়ে যায়।
নিহত রাসেলের ফুফু রুনিয়া বেগম বলেন, আমাদের জমি দখল করে রেখেছে রাহুল। মার্চ-এপ্রিল নদীতে নিষেধাজ্ঞা আছে। এতে মৎস্য বিভাগ ক্যাম্প করতে চেয়েছিল মিয়ারহাট ঘাটে। রাহুল এ ক্যাম্পের বিপক্ষে ছিলেন। আমার ভাই নজরুল ও মনির ক্যাম্পের পক্ষে থাকায় রাহুলের লোকজন বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। রাহুলের লোকজন অতর্কিত হামলা চালিয়ে রাসেলকে হত্যা করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবী করেন তিনি।
এদিকে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মো. মিন্টু ফরায়েজী বলেন, রাহুল ও নজরুলের অনুসারীদের সংঘর্ষে একজন মারা গেছে। কয়েকজন আহতও হয়েছেন। খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং রাহুলসহ পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
রায়পুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসান আখন জাহাঙ্গীর বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়। সঠিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাহুল ও নজরুল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। এঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে। হত্যার কারণ ও দোষীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।
এএজেড